পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইতেছিল না। তাহার কাছে বাবা সর্বশক্তিমান, বাবার ক্ষমতা অপ্রতিরোধ্য। বাবাকে মাটিতে পড়িতে দেখিয়া কাজলের সমস্ত হৃদয় আতঙ্কে সঙ্কুচিত হইয়া আসিল। অপুকে উহারা ধরাধরি করিয়া দোকানের ভিতর তুলিয়া আনিল । কাজলকে কেহ ডাকিল না । সে নিজেই আস্তে আস্তে হঁাটিয়া সবার পিছন পিছন দোকানে ঢুকিয়া দেখিল, তাহার বাবাকে একটা বেঞ্চির উপর শোয়াইয়া জলের ছিটা দিয়া বাতাস করা হইতেছে। কাঠের একটা টেবিলে হেলান দিয়া সে ভাবিবার চেষ্টা করিল, বাবার কিছুই হয় নাই-ঘটনাটা একটা দুঃস্বপ্ন। স্বপ্ন ভাঙিয়া গিয়া এখনই দেখিবে সে বাবার পাশে শুষ্টয়া আছে, গল্প শুনিতে শুনিতে ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। মিনিট কুডি বাদে অপু তাকাইল। সে চিত হইয়া শুইয়া আছে, ওপরে যেন কালো কড়িকাঠ, চারপাশে লোকের কণ্ঠস্বর। বুকে কাহারা একটা ওজন চাপাইয়া দিয়াছে যেন । এটা কোন জায়গা ? সে এখানে শুইয়া কেন ? একটু বাদেই সমস্ত কিছু মনে পড়িতে সে আচ্ছন্নেব মতো হাত বাডাইয়া বলিল-খোকা কোথায় গেল ? খোকা ? কলিকাতার সেদিনকার সেই ঘটনার পর হইতেই অপুর শরীর খুব ভাল যাইতেছে না । কলিকাতার ভালো স্পেশালিস্ট দেখাইয়াছে। ডাক্তার বলিতেছে, ব্লাডপ্রেসার আছে, কিডনীও ভাল কাজ করিতেছে না । খাওয়ার ব্যাপারে নজর রাখিতে হইবে। লবণ কম খাইতে বলিয়াছে। অপু হাসিয়া বলিয়াছিল- এই বয়সে প্রেসার হয় ? বলিয়াই তাহার মনে হইয়াছিল, খুবএকটা কম বয়স তাহার নয়, দেখিতে দেখিতে বয়স বেশ বাডিয়াছে। ডাক্তার বলিলেন-সাধারণতঃ এই বয়সে প্রেসার হয় না । আমার মনে হয়, কিডনীর জন্যে এরকম হচ্ছে। কতকগুলো ওষুধ দিলাম, খেয়ে দেখুন কেমন থাকেন { ঔষধ খাইয়া অপু বিশেষ উপকার বোধ করিল না। মাঝে মাঝে শরীর খারাপ লাগে, সে আমল দেয় না । হৈমন্তীর কড়া পাহারার জন্য নিয়মের হেরফের হইতে পারে না, খাওয়া শোওয়া ইত্যাদি বাধা সময়ে করিতে হয়। অপুর স্বাস্থ্যের জন্য হৈমন্তী বড় উদ্বিগ্ন-সে কোথাও বাহির হইলে না-ফেরা পর্যন্ত হৈমন্তী ঘর-বাহির করে। দেরী হইলে কাজলকে বলে-দেখ তো খোকা একটু এগিয়ে কঁঠালতলার কাছে, তোর বাবা এল নাকি অপু বেশীক্ষণ ঘরে থাকিতে পারে না । তাহার ছেলেবেলা যেন আবার ফিরিয়া আসিয়াছে। বিকালে রৌদ্র পড়িতে না পড়িতে ছেলেকে লইয়া 8ዓ