পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হু হু বাতাস আসিয়া কাগজপত্র এলোমেলো হইতেছে। সবাই ঘুমাইয়া, কেবল বহু দূরের কোন সঁওতাল বস্তীর ক্লান্ত মাদলের শব্দ এখনও 6 | || চিঠি লিখিবার প্যােডটা টানিয়া লইয়া অপু মনে করিয়া করিয়া বহু পুরাতন বন্ধু-আত্মীয়কে এক একখানা চিঠি লিখল। অনেককে লেখা হইল। না-তােহাঁদের ঠিকানা মনে নাই। লিখিল, ভালো আছো ? অনেকদিন খবর নিতে পারি নি, স্বার্থপরের মত নিজের ভেতর নিজেকে গুটিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু মানুষ এক বঁাচে না-তোমাদের সবাইকে আমার জীবনে বড দরকার। আমাকে মনে রেখো, একেবারে ভুলে যেও না যেন। মানুষের মধ্যে বেঁচে আছি-এ বোধটা আমার জীবনে যেমন প্রয়োজন, তোমাদের জীবনেও তেমনি । চিঠিগুলি লিখিতে রাত শেষ হইয়া গেল। পূর্ব দিকের টিলাটার পাশের আকাশে লাল রঙ ধরিল । মেঘের লম্বা স্তরগুলিকে দেখাইতেছে যেন আঁকা ছবি। আলো ফু দিয়া নিভাইয়া অপু বারান্দায় আসিয়া দাডাইল । বিকালে অপু ছেলেকে ডাকিয়া বলিল-খোকা চল, বেরুই কোথাও । উচুনিচু লালমাটিব ডাঙি ধরিয়া দুইজনে কিছু স্থাটিল। অনুচ্চ একটি পাহাড়ের কাছে আসিয়া অপু বলিল-আয়, এখানে বসি । দুইটা ছোট পাথরে দুইজন বসিল । কাজল বলিল-বাবা, সেই যে গল্পটা। নির্জন দুর্গে একলা রাজকুমারী থাকতো, সেটা আজ শেষ করো সে কথা কানে না লইয়া অপু, ডাকিল-খোকা ! --কি বাবা ? -আমার কাছে উঠে আয় তো একটু । কাজল বাবার কোল ঘোঁসিয়া দাড়াইল । --খোকা, তুই আমায় ভালবাসিস ? উত্তর না দিয়া কাজল বাবার বুকে মুখ গুজিয়া রহিল। তাহার বয়সী। ছেলের পক্ষে ইহা বিসদৃশ হইলেও বাবা ও মায়ের আদর পাইলে সে এমনি করিয়া থাকে। অপু ছেলের মাথায় হাত বুলাইতে লাগিল। সূর্যান্তের রঙে রঞ্জিত প্রান্তরে সে অনেকক্ষণ ছেলের সহিত বসিয়া রহিল। ক্রমে আলো কমিয়া কীটপতঙ্গের গুঞ্জন শুরু হইল। অপু উঠিয়া ছেলের হাত ধরিল। -চল, বাড়ি-চল, তোর মা ভাববে। 4