পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেতের সাহায্য পূর্ণ করিবার চেষ্টায়। এরূপ বে-পরোয় ভাবে বেত চালাইয়া থাকেন, যে ছাত্রগণ পা খোড়া ও চক্ষু কানা হওয়ার দুর্ঘটনা হইতে কোনরূপে প্রাণে বঁচিয়া যায় মাত্র । পৌষ মাসের দিন। অপু সকালে লেপ মুড়ি দিয়া রৌদ্র উঠিবার অপেক্ষায় বিছানায় শুইয়াছিল, মা আসিয়া ডাকিল-অপু, ওঠ শীগগিরু করে, আজ তুমি যে পাঠশালায় পড়তে যাবে! কেমন সব বই আনা হবে তোমার জন্যে, শেলেট। হা ওঠে, মুখ ধুয়ে নাও, উনি তোমায় সঙ্গে করে নিয়ে পাঠশালায় দিয়ে আসবেন । পাঠশালার নাম শুনিয়া অপু সদ্য নিদ্রোখিত চােখ দুটি তুলিয়া অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে মায়ের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। তাহার ধারণা ছিল যে যাহারা। দুষ্ট ছেলে, মার কথা শোনে না, ভাইবোনদের সঙ্গে মারামারি করে, তাহাদেরই শুধু পাঠশালায় পাঠানো হইয়া থাকে। কিন্তু সে তো কোনদিন ওরূপ করে না, তবে সে কোন পাঠশালায় যাইবে ? খানিক পরে সর্বজয়া পুনরায় আসিয়া বলিল-ওঠ। অপু, মুখ ধুয়ে নাও, তোমার অনেক করে মুড়ি বেঁধে দেবো এখন, পাঠশালায় ব’সে বসে থেও এখন, ওঠে লক্ষ্মী মানিক ! মায়ের কথার উত্তরে সে অবিশ্বাসের সুরে বলিল, -ইঃ ! পরে মায়ের দিকে চাহিয়া জিভ বাহির করিয়া চোখ বুজিয়া একপ্রকার মুখভঙ্গী করিয়া রহিল, উঠিবার কোন লক্ষণ দেখাইল না। কিন্তু অবশেষে বাবা আসিয়া পড়াতে অপুর বেশী জারিজুরি খাটিল না, যাইতে হইল। মা’র প্রতি অভিমানে তাহার চোখে জল আসিতেছিল, খাবার বঁাধিয়া দিবার সময় বলিল-আমি কখখনো আর বাড়ী আসচিনে, দেখো ! --যাটি ষাট, বাড়ী আসবিনে কি ! ওকথা বলতে নেই, ছিঃ ! পরে তাহার চিবুকে হাত দিয়া চুমু খাইয়া বলিল-খুব বিদ্যে হোক, ভালো করে লেখাপড়া শিখো, তখন দেখবে তুমি কত বড় চাকরী করবে, কত টাকা হবে তোমার, কোনো ভয় নেই!-ওগো, তুমি গুরুমশায়কে ব’লে দিও যেন ওকে কিছু বলে না । পাঠশালায় পৌছাইয়া দিয়া হরিহর বলিল-ছাটি হবার সময়ে আমি আবার এসে তোকে বাড়ী নিয়ে যাবো অপু, ব’সে ৰসে লেখো, গুরুমশায়ের কথা শুনো, দুষ্টুমি কোরো না যেন! খানিকটা পরে পিছন ফিরিয়া অপু চাহিয়া দেখিল বাবা ক্রমে পথের বঁাকে অদৃশ্য হইয়া গেল। অকূল সমূদ্র ! সে অনেকক্ষণ মুখ নীচু করিয়া বসিয়া রহিল। পরে ভয়ে ভয়ে মুখ তুলিয়া চাহিয়া to