পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনটা নয়। বাবাজী, আমি চেয়েছিলাম সবাইকে ভালোবাসতে। তা আর হোলো কই ? একজনকে ভালোবাসলে জীবনটা বড় ছোট হয়ে যায়। কিন্তু সবাইকে ভালোবাসার মত হৃদয়ও তো ভগবান আমাকে দেন নি, কি করি তুমিই বলে ? একটু চুপ করিয়া রামদাস বলিল—এখন মনে হয় গাছ নদী ফুল ফল সবকিছুর ভেতরেই আলাদা কবে দেখবাব মত রূপ আছে, এমন কি পাথরের মধ্যে মাটির মধ্যেও আলাদা সত্তা-আমি তাই দেখি। কি পেলে চাওয়া আমার পূর্ণ হয় তা আমি এখনও জানি না।--তাবই সন্ধানে ঘুরে বেড়াই। অপুর শেষ উপন্যাসটা পাঠকমহলে আলোড়ন আনিযাছিল। জীবনকে এত বিচিত্রভাবে অন্য কোনো লেখক দেখেন নাই--এই বলিয়া বড় বড় কাগজে সমালোচনা বাহির হইল। নূতন উপন্যাস খানিক কাটতি অত্যন্ত বেশী, অন্যান্য বইও ভাল চলিতেছে। অপুব মৃত্যুর পাব পাঠকেরা হঠাৎ যেন তাহাকে লইয়া ক্ষেপিয়া উঠিয়াছে। বইপত্র হইতে আয়ের হিসাব এবং টাকাকডির আদায় ইত্যাদি এখন সুরপতি ও প্রতাপ করিয়া থাকে { হৈমন্তীর ভাঙা সংসারের হাল সুরপতি এখন শক্ত হাতে ধরিয়াছেন। মেয়েকে অভয় দিয়া বলিয়াছেন-তোর কোনো ভয় নেই হৈম, কাজলেব ভবিষ্যতের ভার আমার হাতে রইল। . শ্রীষ্মে প্রখব রৌদ্রে পৃথিবীটা পোডাইয়া থাকু করে, বর্ষায় ঝর-ঝর করিয়া বৃষ্টি পড়ে অদৃশ্য হস্তনিষিক্ত শাস্তিবারির মত। হেমন্তের শিশির পড়ে, শীতে কুয়াশা পাক খায়-সমস্ত হৈমন্ত জানালায় বসিয়া দেখে। যে দেখিতে শিখাইয়াছিল, সে নাই । কলিকাতা হইতে প্রথম প্রথম যখন প্রকাশকদের নিকট হইতে অপুর লেখার জন্য মনি-অর্ডার আসিত এবং হৈমন্তীকে সই কারিয়া টাকা লইতে হইত, তখন হৈমন্তীর চোখে জল আসিত। সে যেন খালি টাকা চাহিয়াছিল। এ সব লইয়া সে কি করিবে ? শেষ বইটা এত নাম করিল, অপু দেখিয়া গোল না। স্বামীর এত সুনাম এত যশ লইয়া সে এখন কি করে ? সুরপতির দৃঢ় বিশ্বাস কাজল বড় রকমের একটা-কিছু হইবে। জজম্যাজিস্ট্রেট করিবার দিকে তাহার তেমন ইচ্ছা নাই, তিনি চান অপুর মত কাজলও একটা স্থায়ী কিছু করুক। সন্ধ্যায় পড়াইতে পড়াইতে তিনি দেন-হৈম, একবার শুনে যা এদিকে। ” r হৈমন্ত্রী আসিয়া বলে--কি বাবা ? 06