পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাহিয়া একটা পথকে দূরে কোথায় যাইতে দেখিয়াছিল সে। পথটার দু’ধারে যে কত কি অচেনা পার্থী, অচেনা গাছপালা, অচেনা বনকোপ,-অনেকক্ষণ সেদিন সে পথটার দিকে একদৃষ্টি চাহিয়াছিল। মাঠের ওদিকে পথটা কোথায় যে চলিয়া গিয়াছে তাহা ভাবিয়া সে কূল পায় নাই। তাহার বাবা বলিয়াছিল, ও সোনাডাঙা মাঠের রাস্তা, মাধবপুর-দশঘর হ’য়ে সেই ধলচিতের খেয়াঘাটে গিয়ে মিশেচে ! ধলচিতের খেয়াঘাটে নয়, সে জানিত ও পথটা আরও অনেক দূরে গিয়াছে ; রামায়ণ, মহাভাবতের দেশে । a. সেই অশথ গাছের সকলের চেয়ে উচু ডালটার দিকে চাহিয়া থাকিলে যাহার কথা মনে উঠে—সেই বহুদূরেব দেশটা ৷ শ্রুতিলিখন শুনিতে শুনিতে সেই দুই-বছর আগে-দেখা পথটার কথাই তার মনে হইয়া গেল । ঐ পথের ওধাবে অনেক দূরে কোথায় সেই জনস্থান-মধ্যবর্তী প্রস্রবণ পর্বত! বনঝোপেব স্নিগ্ধ গন্ধে, না-জানার ছায়া নামিয়া আসা বিকিমিকি সন্ধ্যায়, সেই স্বপ্নলোকের ছবি তাহাকে অবাক করিয়া দিল। কতদূবে সে প্রস্রবণ-গিরির উন্নত শিখব, আকাশপথে সতত-সঞ্চরমাণ মেঘমালায় যাহার প্রশান্ত, নীল সৌন্দর্য সবদা আবৃত থাকে ? সে বড় হইলে যাইয়া দেখিবে । কিন্তু সে বেতসীকণ্টকিত তাঁট, বিচিত্রপুলিনা গোদাবরী, সে শ্যামল জনস্থান, নীল মেঘমালায় ঘেরা সে অপূর্ব শৈলপ্রস্থ, রামায়ণে বর্ণিত কোনো দেশে ছিল। না। বাল্মীকি বা ভবভূতি তাহদের সৃষ্টিকর্তা নহেন। কেবল অতীত দিনের কোনো পাখী ডাকা গ্রাম্য সন্ধ্যায় এক মুগ্ধমতি গ্রাম্যবালকের অপরিণত শিশুকল্পনার দেশে তাহারা ছিল বাস্তব, একেবারে খাট, অতি সুপরিচিত। পৃথিবীপৃষ্ঠে যাহাঁদের ভৌগোলিক অস্তিত্ব কোনোকালে সম্ভব ছিল না, শুধু এক অনভিজ্ঞ শৈশব-মনেই সে কল্পজগতের প্রস্রবণ-পৰ্বত তাহার সতত-সঞ্চরমাণ মেঘজালে ঢাকা নীল শিখরমালার স্বপ্ন লইয়া অক্ষয় আসন পাতিয়া বসিল ! পথের পাঁচালী চতুৰ্দশ পরিচ্ছেদ দুৰ্গা ভাইকে খুজিতে বাহির হইয়াছিল। পাডায় নানাস্থানে খুজিয়া কোথাও পাইল না। অন্নদা রায় মহাশয়ের বাড়ীর কাছে আসিয়া ভাবিল-একবার এখানে দেখে যাই, খুড়ীমার সঙ্গেও দেখাটা হবে এখন ܛ-ܡ