পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• একবার হাসিল-মরীয়ার হাসি। আবার দৌড়, দৌড়, দৌড়-জীবনে এই প্রথম বাধাহীন গণ্ডিহীন, মুক্তির উল্লাসে তাহদের তাজা তরুণ রক্ত তখন মাতিয়া উঠিয়াছিল-পরে কি হইবে, তাহ ভাবিবার অবসর কোথায় ? পরে যাহা হইল, তাহা সুবিধাজনক নয়। খানিক দূরে গিয়া একটা বড় জুলা পড়িল একেবারে সামনে -হোগলা আর শোলা গাছে ভরা, তাহার উপর তাহার দিদি পথ হারাইয়া ফেলিল-কোনো গ্রামও চােখে পড়ে না-সামনে কেবল ধান ক্ষেত, জলা, আর বেত-ঝোপ ।। ঘন বেতবনের ভিতর দিয়া যাওয়া যায়। না, পাকে জলে পা পুতিয়া যায়, রৌদ্র এমন বাড়িয়া উঠিল যে, শীতকালেও তাহাদের গা দিয়া ঘাম বারিতে লাগিল।--দিদির পরণের কাপড় কঁাটায় নানা স্থানে ছিড়িয়া গেল, তাহার নিজের পায়ে দু’তিনবার কঁাটা টানিয়া টানিয়া বাহির করিতে হইল-শেষে রেলরাস্তা দূরের কথা, বাড়ী ফেরাই মুস্কিল হইয়া উঠিল। অনেক দূরে আসিয়া পড়িয়াছে, পাকা রাস্তাও আর দেখা যায় না, জল ভাঙিয়া ধানক্ষেত পার হইয়া যখন তাহারা বহু কষ্টে আবার পাকা রাস্তায় আসিয়া উঠিল তখন দুপুর ঘুরিয়া গিয়াছে। বাড়ী আসিয়া তাহার দিদি ঝুড়ি ঝুডি মিথ্যা কথা বলিয়া তবে নিজের ও তাহার পিঠ বঁাচাইল। সেই রেলের রাস্তা আজ এমনি সহজভাবেই সামনে পড়িবে—সেজন্য ছুটিতে হইবে না, পথ তারাইতে হইবে না-বকুনি খাইতে হইবে না। কিছু দূর গিয়া সে বিস্ময়ের সহিত চাহিয়া দেখিল নবাবগঞ্জের পাকা সড়কের মত একটা উচু রাস্তা মাঠের মাঝখান চিরিয়া ডাইনে বঁায়ে বহুদূর গিয়াছে। রাঙা রাঙা খোয়ার রাশি উচু হইয়া ধারের দিকে সারি দেওয়া। সাদা সাদা লোহার খুঁটির উপর যেন একসঙ্গে অনেক দড়ির টানা বাধা-যতদূর দেখা যায় ঐ সাদা খুটি ও দড়ির-টানা-বাধা দেখা যাইতেছে। তাহার বাবা বলিল-ঐ দ্যাখো খোকা, রেলের রাস্তাঅপু একদৌড়ে ফটিক পার হইয়া রাস্তার উপর আসিয়া উঠিল। পরে সে রেলপথের দুইদিকে বিস্ময়ের চোখে চাহিয়া চাহিয়া দেখিতে লাগিল। দুইটা লোহা বরাবর পাতা কেন ? উহার উপর দিয়া রেলগাড়ী যায় ? কেন ? মাটির উপর দিয়া না গিয়া লোহার উপর দিয়া যায় কেন ? পিছ লাইয়া পড়িয়া যায়। না ? কেন ? ওগুলোকে তার বলে ? তাহার মধ্যে সে সেঁ কিসের শব্দ ? তারে খবর যাইতেছে ? কাহারা খবর দিতেছে ? কি করিয়া খবর দেয় ? ওদিকে কি ইষ্টশান ? এদিকে কি ইষ্টশান ? সে বলিল-বাবা, রেলগাড়ী কখন আসবে ? আমি রেলগাড়ী দেখবো বাবা । 芯8