পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাতের বেলায় ছেলেদের শোবার ঘরের জানলায় কে যেন খুট-খুট শব্দ করে, আর খানিক বাদে কারা যেন ঘরের মধ্যে ফুসফ্লাস কথা কইছে মনে হয়। তিনি নিচের ঘর থেকে বোহিমকে ডেকে নিয়ে এসে দেখলেন সোনার পাশে আঙুটি পাণ্ডুটি অকাতরে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু ঘুমের ঘোরে সোনা একবার ডাকলে, স্পষ্ট শোনা গেল, পুত্ব । আঙুটি পাণ্ডুটি একসঙ্গে বলে উঠল পুতু। সোনার মা একটু ভয় পেয়ে পুতু’টা কে সন্ধান করতে ছেলে-মেয়েদের মনের ভিতরটা এক-একদিন হাতড়ে দেখতে লাগলেন। ছেলে-মেয়েরা যদি জেগে থাকতে পারত তবে তারা দেখতে পেত, সব কচি ছেলেকে তাদের মা চাপড়ে-চাপড়ে ঘুম পাড়িয়ে আস্তেআস্তে বুকে হাত বুলিয়ে সবার মনের মধ্যেকার ছোটােখাটাে সিন্দুকগুলি খুলে তার পরদিনের জন্যে বেশ করে গুছিয়ে রাখছেন । ঠিক যেমন করে পেটরার কাপড় গোছানো হয় তেমনি । সমস্ত দিন খেলায়-ধুলোয় ছেলেরা যে কোথায় কী ছড়িয়ে ফেলে তা তাদের মনেও থাকে না, মা সেগুলি যত্ন করে সাজিয়ে-গুছিয়ে রেখে দেন মনের সিন্দুকে, যাতে সকালে উঠে ছেলে-মেয়েদের আর কিছু খুজতে না হয়। মনের সিন্দুকে যদি কোথাও পোকার মতো তুষ্টুবুদ্ধি দেখেন তো মা সেটি আস্তে-আস্তে টেনে ফেলেন, ভালো বুদ্ধিগুলিকে যত্ন করে কাগজে মুড়ে মলমলের কাপড়ের মধ্যে ঝেড়ে-বুড়ে পোটল বেঁধে তুলে রাখেন। রোজ-রোজ কত টুকিটাকি মনের সিন্দুকে ছেলেরা যে জমা করে, তা দেখে মা এক-এক সময় অবাক হয়ে চেয়ে থাকেন । রাতের বেলায় যদি কচি ছেলেরা জেগে থাকতে পারত তবে এ সবই দেখতে পেত, কিন্তু তারা কচি ছেলে কিনা তাই যেমন মা সুর করে তাদের চাপড়ান, খুকু ঘুমোল পাড়া জুড়োল’ বলেন, অমনি তারা ঘুমিয়ে পড়ে। কোনো-কোনো ছেলে, বর্গি এল দেশে’ এটুকুও শুনতে পায়, তারপর বুলবুলিতে ধান খেয়ে গেল তাও দেখে, কিন্তু তারপর যে কী কাণ্ড ঘটে খুব কম ছেলেই সেটা দেখেছে। সব ছেলের মনের সিন্দুকে একটি করে লুকোনো দেরাজ > >br