পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাতাস ছুটে বেরিয়ে এসেছে—বাইরে। রিদয়ের কুলুপ-দেওয়া ঘরেও আজ দরমার ঝাপগুলোর ফঁাক দিয়ে রোদ উকি দিচ্ছে, সরু সুরে বঁাশি দিয়ে ঢুকছে। রিদয় কিন্তু এসব দেখছে শুনছেও না। সে চুপটি করে বসে নষ্টামির ফন্দি আঁটছে। কিন্তু গর্ত ফেলে ইছর যে আজ নতুন বসন্তে শুকনো পাতায় ছাওয়া বাদামতলায় রোদ পোহাতে বেরিয়ে গেছে, বেড়াল-ছানাটা কাঠালতলায় কাঠবেড়ালির সঙ্গে ভাব করতে দৌড়েছে, গোয়াল ঘরের কপলে গাই তার নেয়াল বাছুরটাকে নিয়ে ল্যাজ তুলে টেকির মতো লাফাতে-লাফাতে মাঠের দিকে দৌড় দিলে, ঘুলঘুলি দিয়ে সেটা হৃদয় স্পষ্ট দেখলে । ঘুলঘুলিটার বাইরে একটা ডালিম গাছ। ডালিমের উপরে ময়ূরের মতো রঙ একটা ছোটাে কি পাখি এসে শিষ দিতে লাগল —রিদয়ের নাগালের ঠিক বাইরেটিতে বসে —‘ও হিরিদয়! ও হিরিদয়। রিদয় ঘুলঘুলির ফাক দিয়ে কাধ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েও মাঝের আঙুলের ডগাটি দিয়ে ডালিমটিকে ছোয়া ছাড়া আর কিছু করতে পারলে না। পাখি ডালিমের আর এক ডালে সরে বসে এমন খিটখিটু খিটখিটু করে হেসে উঠল যে রিদয় একেবারে লজ্জায় মাটি । 娜 সে পাখিটাকে ছুড়ে মারবার জন্তে একটা কিছু খুঁজতে চারদিকে চাইছে, এমন সময় ঘরের কোণে মস্ত দুটো মরচে-পড়া তালা-আঁট মুদরি কাঠের উপরে পিতলের পাৎ আর পেরেকের নক্সা-কাটা বহুকালের সিন্দুকটার দিকে তার নজর পড়ল। যে কুলুঙ্গিতে ইহুরে-চড়া লাল-মাটির গণেশ ছোটাে ঢোলক বাজাচ্ছেন, ঠিক তারি নিচে, ঘরের একদিকের দেয়াল জুড়ে সিন্দুকটা রয়েছে। এতবড়ো যে মনে হচ্ছে যেন একটা রত্নবেদী ! এই সিন্দুকে কী যে আছে, তা রিদয় এ পর্যন্ত দেখেনি ; কিন্তু সে জানে তার ঠাকুরদাদা, তার দাদা, তার আবার দাদার দাদা —এমনি কত পুরুষের বাসন, গয়না আর যা-কিছু ভালো দামী আশ্চর্য সামগ্রী ՖԵ-8