পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

না ! না হলে খোড়া হাসও যে উড়তে পারে, সেটা একবার বুনো হাসদের সে দেখিয়ে দিত। তা ছাড়া এই চক-নিকোবর -এমন হাস নেই যে একে জানে না ; এই একশো বছরের বুড়ো হাস, যার সঙ্গে পয়লানম্বর হাসও উড়ে পেরে ওঠে না, পড়বি তো পড় তারি পাল্লায় । যে চকা পোষা হাসকে হাসের মধ্যেই ধরে না, লঙ্গ পেতে হল কিনা তারি সামনে! এ দুখু সে রাখবে কোথায়! খোড়া সবার পিছনে ভাবতে ভাবতে চলল-বাড়ি ফিরবে, কি, প্রাণ যায় তবু সমানে বুনো হাসের সঙ্গে চলে সে দেখিয়ে দেবে যে সেও জানে উড়তে! রিদয় এই সময় খোড়াকে বললে—সুবচনীর কৃপায় এতদূর এসেছ, আর কেন ? এইবার ফের। এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে, গিয়ে শেষে দম-ফেটে মরবে নাকি! আমি তো ওদের মতলব ভালো বুঝছিনে ? রিদয় কিছু না বললে হয়তো খোড়া আপনা-হতেই বাড়িমুখো হত ; কিন্তু এই বুড়ো-আংল, এও ভাবছে তাকে কমজোর। খোড়া বিষম রেগে ধমকে উঠল—‘ফের কথা কইলে মাটিতে ঝেড়েফেলে চলে যাব।’ বলেই রেগে ডান আপসে খোড়া এমনি তেজে উড়ে চলল যে বুনো হাসরাও একেবারে অবাক হয়ে গেল। রাগের মুখে গে-ভরে যেমন তেজে খোড়া চলেছিল, রাগ পড়লে সে তেজ থাকত কিনা সন্দেহ । কিন্তু ঠিক সেই সময় সূর্য পাটে সতে চললেন। দেখতে-দেখতে বেল পড়ে এল। অমনি হাসরা সবাই জমি মুখো হয়ে ঝুপ-ঝাপ আকাশ থেকে চাদপুরের সামনে মেঘনার মাঝে বাগদী চরে নেমে পড়ল। চরে উড়ে বসতেই রিদয় হাসের পিঠ থেকে লাফিয়ে পড়ল। তখন চরের উপর থেকে সবেমাত্র জল সরে গেছে, ভিজে কাদা তখনো কালো প্যাচ-প্যাচ করছে—মাঝে-মাঝে ডোবায় এখনো জল বেঁধে আছে। এবড়ো-খেবড়ো ভাঙা-চোরা পিছল চর ; খানা, ডোবা, নালা, এখানে-ওখানে, এরি উপরে সন্ধ্যের হিম হাওয়া বইছে। রিদয়ের গা কাটা দিয়ে উঠল শীতে। নদীর কিনারায় 赣 ২১৩