পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রিদয় ভেবেছিল এখান থেকেই সে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু হাসের ইচ্ছে শুনে সে একটু তা-না-না করে বললে—‘দ্যাখে, আমার সঙ্গে তোমার বনবে কি ? আমি তোমাকে আগে কত জ্বালাতন করেচি। কিন্তু রিদয় দেখলে ও স আগের কথা ভুলে গেছে, রিদয় যে তার প্রাণ বঁচিয়েছে খাইয়ে যত্ন করে, সেই কথাই সে খোড়া হাস মনে রেখেছে। এ বার বাপ-মায়ের কথা তুলে রিদয় হাসকে বাড়ি ফেরাবার চেষ্টা করলে, কিন্তু হাস বললে—“কোনো ভাবনা নেই, আসছে শীতে তোমায় আমি ঠিক বাড়িতে পৌছে দেব। তোমাকে ঘরের দরজায় নামিয়ে দিয়ে তবে আমার ছুটি । তার মধ্যে তোমায় একলা ছেড়ে আমি কোথাও নড়ব না – প্রতিজ্ঞা করছি ? রিদয় ভাবছে—মন্দ না ! এই যক্ হয়ে মা-বাপের কাছে এখন না যাওয়াই ভালো ! কী জানি, মানস-সরোবর থেকে হয়তো কৈলাসেও গণেশের সন্ধান করা যেতে পারবে । এই ভেবে রিদয় খোড়া হাসকে জবাব দেবে এমন সময় পিছনে অনেকগুলো ডানার ঝটপট শোনা গেল। এক-কুড়ি বুনো হাস একসঙ্গে জল ছেড়ে ডাঙায় উঠে গায়ের জল ঝাড়ছে। তারপর মাঝে চকা-নিকোবরকে রেখে সারিবন্দী সব হাস তাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। খোড়া হাস বুনো হাসদের চেহারা দেখে একটু ভয় খেলে। সে ভেবেছিল হাস-মাত্রে পোষা হাসের মতো দেখতে ; আর ধরনধারণও সেই রকম। কিন্তু এখন দেখলে বুনো হাসগুলো বেঁটেখাটো গাটা-গোটা-কাটখোট্টা-গোছের । এদের রঙ তার মতো শাদ নয়, কিন্তু ধুলো-বালির মতো ময়লা, পালক এখানে খয়েরী, খাকির ছোপ। আর তাদের চোখ দেখলে ভয় হয়—হলুদবর্ণ— যেন গুলের আগুন জ্বলছে ! খোড়া বরাবর দেখে এসেছে হাস চলে হেলতে-তুলতে –পায়ে-পায়ে; কিন্তু এর চলছে খটমট চটপট –যেন ছুটে বেড়াচ্ছে। আর এদের পাগুলো বিস্ত্রী –চ্যাটালো, কেটেকেটে, ফটা-চটা – হতকুৎসিত ! দেখলেই বোঝা যায় যেখানেসেখানে শুধু-পায়ে এরা ছুটে বেড়ায়—জল-কাদা কিছুই বাছে না । ২১৬