পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সোনালি হয়ে উঠল। তারপর বনের ওপারে সূর্য উঠলেন। বেলায় উঠত, কাজেই সূর্যকে চিরকাল রিদয় দেখে এসেছে কাচা-সোনার মতো হলুদ বর্ণ; সূর্য যে ক্ষেপ মোষের চোখের মতো এমন লাল টকটকে, তা তার জ্ঞান ছিল না; তার ঠিক মনে হল কে যেন রাত্তিরের কাণ্ডকারখানা শুনে রেগে তার দিকে চাচ্ছেন! তারপর গাছের ফঁাকে-ফাকে সকালের আলো উকি মারতে লাগল-বনের গাছ-পালা, জীব-জন্তু রাতের আড়ালে আবডালে অন্ধকারে বসে কী কাও করেছে, তারি খোজ নিতে লাগল। বনের তলাকার চোরর্কাট, শেয়াল-কঁাট, কাটি কুটি, কাটা-খোচ, যা-কিছু সব যেন আলোর ধমকে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল। ক্রমে মেঘে-মেঘে আলো পড়ল-রঙ ধরল ; গাছের পাতা, ঘাসের শিষ, ফোট-ফুলের পাপড়ি, তার উপরে শিশিরের ফোট —সবই আলোতে ঝলক দিতে থাকল ! যেন সবাই সিদ্ধর পরে সাটিনের কাপড়ে সেজেছে! ক্রমে চারিদিক আলোতে আলোময় হয়ে উঠল ; অন্ধকারের ভয় দেখতে-দেখতে কোথায় পালাল ; আর অমনি কত পাখি, কত জীব-জন্তুই না বনে ছুটোছুটি আরম্ভ করলে ! লাল-টুপি-মাথায় কাঠঠোকরা ঠকাস-ঠকাস, গাছের ডালে ঘা দিতে বসে গেল, কাঠবেড়ালি অমনি খোপ ছেড়ে গাছের তলায় বসে কুটুস-কুটুস বাদাম ছাড়াতে লেগে গেল ; গাং-শালিক, গো-শালিক, ছাতারে, গাছের তলায় নেমে শুকনে পাতা উল্টে-উণ্টে কিড়িং ফড়িং ধরে-ধরে বেড়াতে লাগল ; আগ-ডালে বসে শুামা-দোয়েল শিস দিতে আরম্ভ করলে। রিদয়ের মনে হল সূর্য যেন সব পশু-পাখি কীট-পতঙ্গদের জাগিয়ে দিয়ে অভয় দিতে থাকলেন–রাত পালিয়েছে, তোরা ঘর ছেড়ে বার হ, আমি এসেছি ভয় নেই! রিদয় শুনলে মেঘনার চরে হাসের ডাকাডাকি, হাকাহাকি লাগিয়েছে, দল একত্র হচ্ছে। চক-নিকোবর হাকলে –‘মানসসরোবর ! ধৌলাগিরি। আও আও আও । তারপর রিদয় দেখল তার মাথার উপর দিয়ে নিকোবরের পুরো দল উড়ে চলল – ২২৬