পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৈতের মতো পাহাড়ের গা বেয়ে গাছ-পালার মধ্যে দিয়ে ঝুলে পড়েছে —এই পাহাড়ের দেওয়াল ডিঙিয়ে হাসের কার্সিয়ংয়ের মুখে চলল --পাংখাবাড়ি থেকে কারসিয়ং দুধারে ঝরন। আর চা বাগান সবজি-খেত, থাকে-থাকে পাহাড়ের গায়ে পাহাড়ি বস্তি, সাহেবদের কুঠি, কার্সিয়ং শহরটা যেন আর একটা ঝরনার মতো দেখা যাচ্ছে—পাহাড়ি গোলাপ গেদা গাছ-আগাছার কুঁড়ি ধরেছে। বঁ-ধারে দূরে কালো-কালো পাহাড়ের শিখরে বরফের পাহাড় যেন দুধের কেনার মতে উথলে পড়েছে। একদল বাঙালি বে। ছেলে-পুলে নিয়ে কার্সিয়ংয়ের ইষ্টিশানের উপরের রাস্তায় হাওয়া খেতে বেরিয়েছে –গিন্নি সবে অসুখ থেকে উঠেছেন, তিনি ছাতি মাথায় দাঙি চেপে চলেছেন, কর্তা লাঠি ধরে সঙ্গে, পিছনে চার মেয়ে, ছোটে-বড়ে তিন ছেলে, এক বো, দুই জামাই, একপাল নাতি-পুতি হাসি-খুশি লুটো-পাটি করে চলেছে। কেউ পাহাড় থেকে ফুল তুলছে, কেউ রাস্তা থেকে মুড়ি কুড়োচ্ছে,একটা ছেলের হাতে প্রজাপতির কুড়োজাল দেখে রিদয় চেচিয়ে বললে –‘ধর নু ধর না, যক হবে।’ হাসের বলে চলল –‘ফুল যত চাও তোল, গোলাপ ফুটল বলে, গাদা ওই ফুটেছে, চেরি ফুলে রঙ ধরছে, আমরা এনেছি, নাও কলাই-শুটি নাও, ফুলকপি নাও, আপেল নাও, নাসপাতি যত পার খাও নাও দাও থোও, প্রজাপতি ধরা ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও ! দেখতে-দেখতে মেঘে কার্সিয়ং ঢেকে গেল, ছেলে-বুড়ে ঘরবাড়ি বাজার-ইষ্টিশান মায় ছোটো রেল গিদা পাহাড় ডাউনহিল সব কুয়াশায় চাপা পড়ল, দূরে সিঞ্চল মেঘের উপরে মাথা তুলে দেখা দিল । এইবার রিদয়ের শীত আরম্ভ হল । খোড়া হাস ডানা ছড়িয়ে উড়ে চলেছে, পালকের মধ্যে ঢোকবার যো নেই, জলে-শীতে থরথর করে বেচারা কাপতে লাগল, খে {ড়াও বাঙলা-দেশের মানুষ, পাহাড়ের শীতে তারও ড্রানার পালকগুলো কাটা দিয়ে উঠল, সে ডাক দিলে—“শীত-গীত হংপাল শীতে গেল।’

  • BS