পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগী-গোফ রংপো নদীটি খুৰ বড়ো নদীও নয় ম্যাপেতেও তার নাম ওঠেনি। 'ঘুম আর বাতাসিয়া দুই পাহাড়ের বঁাকের মধ্যে ছোটাে একটি ঝরনা থেকে বেরিয়ে নদীটি পাহাড়ের গা বেয়ে ছু-ধারের বনের মাঝ দিয়ে মুড়ি পাথর ঠেলে আস্তে-আস্তে তরাইয়ের জঙ্গলে নেমে গেছে, নদীর ছ-পার করঞ্চ টেপারি তেলাকুচে বৈচা ডুমুর জাম এমনি সব নানা ফল নানা ফুল গাছে একেবারে হাওয়া করা, মাথার উপরে আকাশ সবুজ পাতার ছাউনিতে ঢাকা, তলায় সরু নদীটি বির-ঝির করে বয়ে চলেছে ! এই পাখির গানে ভোমরার গুনগুনে ফুলফলের গন্ধে জলে কুলকুল শব্দে ভরা অজানা এই নদীর গলিপথ দিয়ে হাসের নেমে চলেছে আবার শিলিগুড়ির দিকে। উপরে মেঘ করেছে, বনের তলা অন্ধকার । শেওলা জড়ানো একটা গাছের ডাল এক থোকা লাল ফুল নিয়ে একেবারে নদীর জলে ঝুকে পড়েছে, তারি উপরে লাল টুপি নীল গলাবন্ধ সবুজ কোর্তা পরে-পরে মাছরাঙা নদীতে মাছ ধরতে বসেছে বাদলার দিনে । নদীর মাঝে একরাশ পাথর ছড়ানো ; তারি কাছাকাছি এসে চকা হাক দিলে —‘জিরওবে, জিরওবো। আমনি মাছরাঙা সাড়া দিলে –‘জিরোওজিরোও । আস্তে-আস্তে হাসের দল ঝবনার স্রোতে পিছল পাথরগুলোর উপর একে-একে উড়ে বসল। এমনি জায়গায়জায়গায় জিরিয়ে-জিরিয়ে চলতে-চলতে সন্ধ্যা হয়ে এল নিচের অন্ধকার পাহাড়ের চুড়োর দিকে আস্তে-আস্তে উঠতে আরম্ভ করলে, মনে হচ্ছে কে যেন বেগুনী কম্বলের ঘেরাটোপ দিয়ে একটার পর একটা পর্বত মুড়ে রাখছে, দেখতে-দেখতে আকাশ কালো হয়ে গেল, তারি মাঝে গোলাপী এক-টুকরো ধোয়ার মতো দূরের বরফের চুড়ে রাত্রের রঙের সঙ্গে ক্রমে মিলিয়ে গেল । ২৭৬