পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর পারিনে যন্ত্রণা সইতে। আমি বলি, ‘মা এই শরীর তোমার, এক সবদিক দেখা কি তোমার কর্ম, দু-চারটে দাস-দাসী নায়েব-গোমস্ত বেশি রাখলে হয় না ? কিন্তু সে বড়ো কর্মিষ্টি, নিজের হাতে ছেলে-মানুষ ধান-বোন রান্না-করা গাই-দোয়া সব করবে ! আমি বলি –‘মা, শরীর যে ক্ষেয় হলো | কিন্তু বেী কেবলি বলে –‘ভালো দিন আসছে বুদি আসছে। আর ভালো দিন । ছেলেগুলো বড়ো হয়ে চাকরির চেষ্টায় বিভূয়ে বিদেশে টে-টো করে ঘুরতে লাগুল, কেউ বিদেশ গিয়ে সংসার পাতলে, ছেলেপুলে হল কিন্তু বুড়িকে আর কেউ দেখলে না । জমি জমা গহনা-গাটি বেচে ছেলে-মেয়ে নাতি-পুতি এমনি তিনপুরুষ ধরে সবাইকে বিয়ে দিয়ে চাকরি নিয়ে বিদেশে পাঠাতে-পাঠাতে বুড়ি ক্রমে সর্বস্বাস্ত হয়ে না খেয়ে মরবার দাখিল হল ! ছেলে-মেয়ে কত যে জন্মাল, মানুষ হল, বড়ো হয়ে বুড়িকে একলা রেখে চলে গেল, এই গয়লাবাড়িতে ক’পুরুষ ধরে কত কারখানাই দেখলুম যে, তা কী বলি ! এদানি বুড়ি আর ছঃখু করত না, ছেলেদের কথা হলে বলত— বৃদি এখানে এলে তাদের তো কষ্ট বই আরাম হবে না, তবে কেন আর তাদের ডেকে পাঠাই ; এই তো ভাঙাবাড়ি, এখানে জায়গা কোথায় তাদের বসবার শোবাব খাবার ; ওই বাপ-ম’ হারা আমার শিবরাত্রির সলতে ওই ছোটো নাতিটি বেঁচে থাক, মরবার সময় তবু মুখে জল দেবার একজন তো বইল –কী বলিস ! কিন্তু এ নাতিও বড়ো হয়ে যেদিন কুলির সর্দারি করতে বিদেশে গেল সেদিন থেকে বুড়ির আর চোখের জল থামল না। সে দিন-দিন কুঁজে হয়ে পড়ল, হাল-গরু জোতজমা সমস্ত পাচ ভূতে লুঠে পালাল, বুড়ি দেখেও দেখলে না –শেষে এখানে আর কেউ রইল না —এই বুদি আর ওই বুড়ি ছাড়া। বুডি খেতে পায় না দেখে আমি একদিন বললুম —‘মাগো, কসায়ের কাছে আমাকে বেচলে তো পয়সা পাও, তা কর না কেন ? বুড়ি আমার গল। ধবে বললে –‘বুদি সব ছেলে-মেয়ে o63