পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেয়ে, আমার শাপে মানুষ হয়েছিল, এখন সে চন্দ্রলোকে গেছে, সেখানে এক রাজপুত্র তাকে বিয়ে করেছে, সে মুখে আছে।’ ব্রাহ্মণী হাত জোড় করে বললেন, ঠাকুর দয়া করে আমার মেয়েকে একবার দেখাও আমার বুকটা একটু ঠাণ্ডা হোক। ঋষি বললেন, “আজ থেকে এক বৎসর পরে ও প্রতি বৎসর কোজাগর পূর্ণিমায় দিঘির ধারে মেয়েকে দেখতে পারে। ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী সেই এক বৎসর শুদ্ধাচারে কাটালেন, পূর্ণিমা ফিরে এল। ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী দিঘির ধারে গেলেন। দেখলেন পূর্ণিমার চাদ উঠেছে –আকাশে চাদ —দিঘির জলে চাদের ছায়া, ঘাসের উপর গাছের উপর মেঘের গায়ে চাদের আলো, আর সেই চাদের আলোয়, একটি পদ্মের উপরে চাদনি ভেসে আসছে, কোলে তার একটি মেয়ে, যেন ফুটন্ত গোলাপ । সেই মেয়ে আধো-আধো স্বরে কচি হাতটি নেড়ে ডাকছে –"ায় চাদ আস’ । চাদনি বলছে— ‘চাদ কোথা পাব বাছা জাতুমণি ! মাটির চাদ নয় গড়ে দেব গাছের চাদ নয় পেড়ে দেব, তুই চাদের শিরোমণি, ঘুমে রে আমার খুকুমণি ॥ আদর করে বলতে বলতে পদ্মফুলটি কিনারায় এল। ব্রাহ্মণী আদর করে বুকে তুলে নিয়ে বুক জুড়োলেন। মায়েতে মেয়েতে মিলন হল । ব্রাহ্মণ চাদনির মেয়েকে আদর করলেন, হাসিতে কান্নাতে রাত ফুরিয়ে এল ; তখন চাদ থেকে চাদপান চাদনির বর এসে চাদনিকে নিয়ে চন্দ্রলোকে চলে গেল। ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী শূন্ত মনে ঘরে ফিরে এলেন । তারপর অনেকদিন –এক বৎসর পরে চাদান পদ্মফুলে ভাসতে ভাসতে এসে ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণীকে নিয়ে চন্দ্রলোকে চলে গেছে। দেশের লোক ভাবলে ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী মেয়ের শোকে সন্ন্যাসী হয়ে চলে গেল। চাদনি এখন চন্দ্রলোকে নাতি নাতনি নিয়ে গল্প করে আর যখন কাছে কেউ না থাকে তখন আপন মনে চরকা কাটে । পূর্ণিমার চাদ উঠলে তোমরা দেখতে পাবে চাদনিবুড়ি চরকা কাটছে। 88ఏ অ, ৩য়—২৯