পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবীর বাহন ইন্দ্রহাম রাজা পুরীর মন্দিরটা তো হাতে গড়েননি, তাই তার নাম রয়ে গেল ইতিহাসে আর কালে পাথরের শিলে খুব গভীর করে কাটা । কিন্তু .যারা মন্দিরটা এমনকি মন্দিরের দেবতাকেও গড়লে তাদের ইতিহাসে তো নাম রইলই না, মন্দিরের একখান। পাথরের গায়েও তাদের নাম লেখা নেই। • রাজা বিমলা দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে বসলেন —ব্রাহ্মণদের আর-একটা জমিদারী বাড়ল —তারা রাজাকে আশীৰ্বাদ করে ঘরে গেল, কিন্তু দেবী তো খুশি হলেন না। গভীর রাত্রে রাজাকে স্বপন হল —জগন্নাথের সামনে তার গডুর হাতজোড় করে থাকবে, আর আমার শাদুল কি কেউ নয় যে তুই তাকে একেবারেই মন্দিবে জায়গা দিলিনে ! রাজার নিদ্রাভঙ্গ হল ঘাম আর কম্প দিয়ে । তখনই শিল্পীর ডাক পড়ল, সভাপণ্ডিত এসে তাকে শাদুলের ধ্যানট। শুনিয়ে দিলেন –সিংহের মতো মাজা, বাঘের মতো মুখ, কুকুরের মতো থাবা, গরুর মতো ল্যাজ । শিল্পী মাথা চুলকে বাড়ি গেল। এই শিল্পীর নাম লোকে এখনও বলে –শিবাই সাতরা । শিবাই একটার-পর-একটা সিংহ গড়ে রাজাকে দেখাচ্ছে—কোনোটা হচ্ছে ঠিক সিংহ, কোনোটা বাঘ, বিড়াল, কুকুর –কিন্তু একটাও রাজার মনোমত হচ্ছে না, দেবীও ক্রমাগত শিবাইকে স্বপন দিচ্ছেন ‘হল না, হল না। কিন্তু সিংহবাহিনী-রূপে একটিবারও দেখা দিচ্ছেন না –পাছে শিল্পী তার শাদুলকে চট করে ধরেই পাথরে কেটে ফেলে। ওদিকে দুঃস্বপ্নে আর রাজার তাড়ায় শিবাই দিন-দিন রোগ হচ্ছে এবং তার যেটুকু যা বিদ্যেবৃদ্ধি এক শাদুলের ভাবনায় শুকিয়ে উঠেছে ; আঠারো নালার ধারেই শিবাই-এর ঘর। বর্ষার পরে তখন ভরপুর জল আয়নাব মতো পরিষ্কার তক্তক করছে ; সাতরার বেী গেছে জল নিতে, ঠিক সেই সময় আকাশপথে চলেছেন দেবী সিংহবাহিনী, জলে পড়ল প্তার ছায়া। নিমেষের মতো যেন নীল আকাশ দিয়ে বিদ্যুৎ খেলে গেল কিংবা যেন জলের তলা দিয়ে একটি সোনার পদ্ম ভেসে গেল । ৪৬১