পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর সেটা এসে ঘাড়ে পড়বার আগে সব পাখির চিরকাল যা করে থাকে, আজও ঠিক তাই করছে। কুঁকড়ে দেখলেন আকাশের অনেক উপরে থেকে সত্যিই বাজপাখি ঘুরে ঘুরে নামছে। তার কালো ছায়াটা যেন কালে হাতের মতো একবার খানিকক্ষণ ধরে সব পাখিদের উপর দিয়ে যেন তাদের একে-একে গুনতে গুনতে এক পাক ঘুরে গেল ; আমনি সব পাখি ভয়ে জড়সড়, আর-এক পা কুঁকড়োর দিকে এগিয়ে এল। বিপদের সময় কুঁকড়োর আশ্রয় তার চিরকাল না চেয়েও যে কুঁকড়ে সেটাকে সরিয়ে দিয়েছেন, এবারও তা হবে না কেন। কুঁকড়ে সেই রক্তমাখা বুক ফুলিয়ে সত্যিই সোজা হয়ে দাড়ালেন, তার পর ঘাড় তুলে হুকুম হাকলেন, ‘আয় তোরা আয়, কাছে আয়, বুকে আয়, ভয় নেই, ভয় নেই। আমনি বাচ্ছাগুলোকে ডানার মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে সবাই কে কার ঘাড়ে পড়ে, ছুটে এসে কুঁকড়োর গ ঘেষে দাড়াল কাতারে কাতারে সব পাখি । পোশাকী মোরগগুলোর কাছে কেউ গেলও না, তাদের আশ্রয়ও কেউ চাইলে না । কেননা পোশাকী তারা নিজেরাই ভয়ে কঁপিছিল এ-ওকে জাপটে ধ’রে । বাজের ছায়া আবার সবার উপর দিয়ে ঘুরে চলল, এবারে আরো কালো, আরো বড়ে ; আর সবাই এমন-কি পালোয়ান হায়দারি পর্যন্ত ভয়ে গুটিয়ে যেন পালকের পুটলিটি। কেবল সবার উপরে মাথার মোরগফুল লাল নিশেনের মতো উচু করে দাড়িয়ে রয়েছেন কুঁকড়ে, রক্তমাখা বুক ফুলিয়ে। বাজপাখি আর-এক পাক ঘুরে এল, এবার সে একেবারে কাছে এসেছে, কালবোশেখের মেঘের মতো কালো হয়ে উঠেছে তার ভয়ংকর কালো ছায়া ; সমস্ত যেন অন্ধকার করে আসছে সেটা আস্তে আস্তে। ভয়ে মায়ের বুকের মধ্যে বাচ্ছাগুলো পর্যন্ত কঁাদতে থাকল। সেই সময় কুঁকড়োর সাড়া আকাশ ভেদ করে উঠল, ‘অবতক হাম জিন্দা হ্যায়, অবতক হাম দেখত হ্যায়, অবতক হাম মালেক হ্যায় ... ?

  • r