পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই আশ্চর্য সুন্দরী পদ্মিনীকে নিয়ে ভীমসিংহ যখন চিতোরের এক ধারে শাদা-পাথরে বাধানো সরোবরের মধ্যস্থলে, রাজঅন্তঃপুরের শীতল কোঠায় মুখে দিন কাটাচ্ছিলেন, সেই সময়ে একদিন দিল্লীতে তখনকার পাঠান-বাদশাহ আল্লাউদ্দীন, খাসমহলের ছাদে গজদন্তের খাটিয়ায় বসে বসন্তের হাওয়া খাচ্ছিলেন । আকাশে চাদ উঠেছিল, পাশে শরবতের পেয়ালা-হাতে পিয়ারী বেগম বসেছিলেন, পায়ের কাছে বেগমের এক নতুন বঁাদী সারঙ্গীর মুরে গান গাইছিল। বাদশ! হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘কী ছাই, আরবী গজল । হিন্দুস্থানের গান গাও !' তখন পিয়ারী বেগমের নতুন বঁাদী নতুন করে সারঙ্গী বেঁধে নতুন সুরে গাইতে লাগল—‘হিন্দুস্থানে এক ফুল ফুটেছিল— তার দোসর নেই, জুড়ি নেই। সে কী ফুল, আহা সে যে পদ্মফুল, সে যে পদ্মফুল— চারিদিকে নীল জল, মাঝে সেই পদ্মফুল ! দেবতার মে ফুলের দিকে চেয়েছিল, মানুষে সে ফুলের দিকে :চেয়েছিল, চারিদিকে অপার সিন্ধু তরঙ্গভঙ্গে গর্জন করছিল! কার সাধ্য সমূদ্র পার হয়, কার সাধা যে রাজার বাগিচায় সে ফুল তোলে! সে রাজার ভয়ে দেবতারাও কম্পমান ? আল্লাউদ্দীন বলে উঠলেন, ‘আমি হিন্দুস্থানের বাদশা, আমি কোনো রাজার ও তোয়াক্কা রাখি না, কোনো দেবতাকেও ভয় করি না । পিয়ারী ! আমি কালই সেই পদ্মফুল তুলতে যাব! বাদী আবার গাইতে লাগল—কে সেই ভাগ্যবান সিন্ধু হল পার? কে সে গুণবান তুললসে ফুল – মেবারের রাজপুত-বীরের সন্তান— রানা ভীমসিংহ– নির্ভয়, স্বন্দর ? আল্লাউদ্দীন কিংখাবের সিংহাসনে সোজা হয়ে বসলেন, আনন্দের স্বরে গান শেষ হল—‘আজ চিতোরের অন্তঃপুরে যে ফুল বিরাজে, কবি যার নাম গায় ভারতে, তার দোসর কোথা ? জগতে তার জুড়ি কই ? ধন্য রানা ভীমসিংহ! জয় রাজরানী— চিতোরের রাজ-উদ্যানে প্রফুল্ল পদ্মিনী। আল্লাউদ্দীনের কানে অনেকক্ষণ ধরে বাজতে লাগল—‘চিতোরের রাজ-উদ্যানে প্রফুল্ল পদ্মিনী! তিনি আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে বলে উঠলেন, ‘বাদী তুই কি স্বচক্ষে ఫెసి