পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝনঝনার সঙ্গে আর-এক ভয়ংকর খেলার আয়োজন চলতে লাগল— সে খেল লোকের প্রাণ নিয়ে খেল— তাতে বুকের রক্ত, ছুরির ঘা, কামানের গর্জন আর যুদ্ধের খোলা মাঠ ! শেষে একদিন পাঠানবাদশার কালে নিশান শকুনির মতে মেবারের মরুভূমির উপর দেখা দিলে। ভীমসিংহ হুকুম দিলেন, কেল্লার দরজা বন্ধ কর।’ ঝনঝন শব্দে চিতোরের সাতটা ফটক তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে গেল । আল্লাউদ্দীন ভেবেছিলেন— যাব আর পদ্মিনীকে কেড়ে আনব ; কিন্তু এসে দেখলেন, বুকের পাজর প্রাণের চারিদিক যেমন ঢেকে রাখে, তেমনি রাজপুতের তলোয়ার পদ্মিনীর চারিদিক দিবারাত্রি ঘিরে রয়েছে। সমুদ্র পার হওয়া সহজ, কিন্তু এই সাতটা ফটক পার হয়ে চিতোরের মাঝখান থেকে পদ্মিনীকে কেড়ে আনা অসম্ভব। পাঠান বাদশ পাহাড়েব নিচে তাবু গাড়বার হুকুম দিলেন । সেইদিন গভীর রাত্রে যুদ্ধের সমস্ত আয়োজন শেষ করে রানা ভীমসি’ত পদ্মিনীর কাছে এসে বললেন, পদ্মিনী তুমি কি সমুদ্র দেখতে চাও? যেমন অনন্ত নীল সমুদ্রের ধারে তোমাদের রাজপ্রাসাদ ছিল, তেমনি সমূদ্র ? পদ্মিনী বললেন, ‘তামাশা রাখ, তোমাদের এ মরুভূমির দেশে আবার সমুদ্র পেলে কোথা থেকে ? ভীমসিংহ পদ্মিনীর হাত ধরে কেল্লার ছাদে উঠলেন। অন্ধকার আকাশ–চন্দ্র নেই, তার নেই, পদ্মিনী দেখলেন সেই অন্ধকার আকাশের নীচে তার একখান কালো অন্ধকার কেল্লার সম্মুখ থেকে মরুভূমির ওপর পর্যন্ত জুড়ে রয়েছে। পদ্মিনী লে উঠলেন, রানা, এখানে সমুদ্র ছিল, আমি তো জানি না, মাগো, শাদা-শাদ ঢেউ উঠছে দেখ। ভীমসিংহ হেসে বললেন, পদ্মিনী, এ যে-সে সমুদ্র নয় ; এ পাঠান-বাদশার চতুরঙ্গ সৈন্যবল ! ঐ দেখ, তরঙ্গের পর তরঙ্গের মতো শিবিরশ্রেণী ; জলের কল্লোলের মতো ঐ শোন সৈন্তের কোলাহল ! আজি আমার মনে হচ্ছে, সেই নীল সমুদ্র যার বুকের মাঝ থেকে আমি একটি সোনার পদ্মফুলের মতো তোমায় ছিড়ে এনেছি, সেই সমুদ্র যেন আজ এই চতুরঙ্গিণী মূর্তি ধরে So Y