পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেই আয়নার ভিতর পদ্মিনীর রূপের ছটা, হাজার-হাজার বাতির আলো যেন আলোময় করে প্রকাশ হল ! বাদশা দেখতে লাগলেন সে কী কালো চোখ ! সে কী সুটানা ভুরু ! পদ্মের মৃণালের মতো কেমন কোমল দুখানি হাত ! বাকী মল-পরা কী সুন্দর তুখানি রাঙা পা ! ধানী রঙের পেশোয়াজে মুক্তোর ফুল, গোলাপী ওড়নায় সোনার পাড়, পান্নার চুড়ি, নীলার আংটি, হীরের চিক্‌ ! বাদশ আশ্চর্য হয়ে ভাবলেন– একি মানুষ না পরী? আল্লাউদ্দীন আর স্থির থাকতে পারলেন না ; তিনি মছনদ ছেড়ে সেই প্রকাণ্ড আয়নার ভিতর ছায়া-পদ্মিনীকে ধরবার জন্য দুহাত বাড়িয়ে ছুটে চললেন ; গ্রহণের রাত্রে রাহু যেমন চাদকে গ্রাস করতে যায় ! ভীমসিংহ বলে উঠলেন— শাহেনশ, পদ্মিনীকে স্পর্শ করবেন না ।" রানার মনে হল, রাজদরবারের একদিকে বসে সত্যই তার পুণ্যবতী রানী পদ্মিনী যেন পাঠানের হাতে অপমান হবার ভয়ে কাপছে ! রাগে রানার দুইচক্ষু রক্তবর্ণ হয়ে উঠল, তিনি সেই ঘরের মাঝখানে দাড়িয়ে উঠে সোনার একটা পেয়াল সেই আয়নাখানার ঠিক মাঝখানে সজোরে ছুড়ে মারলেন— ঝনঝন শব্দে সাত হাত উচু চমৎকার সেই আয়ন চুরমার হয়ে ভেঙে পড়ল। আল্লাউদ্দীন চমকে উঠে তিন পা পিছিয়ে দাড়ালেন। তিনি মনে বুঝলেন, পাগলের মতে রানীর দিকে ছুটে যাওয়াট। বড়োই অভদ্রতা হয়েছে, এজন্য রানার কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার । বাদশ ভীমসিংহের দিকে ফিরে বললেন, ‘রানা, আমার অন্যায় হয়েছে, আমার মহলে এসে যদি কেউ এমন অভদ্রতা করত, তাহলে হয়তো আমি তার মাথা কেটে ফেলতে হুকুম দিতুম। আমায় ক্ষমা করুন। তারপর অনেক তোষামোদ, অনেক অনুনয়-বিনয়ে রানাকে সন্তুষ্ট করে গভীর রাত্রে আল্লাউদ্দীন ভীমসিংহের কাছে বিদায় চাইলেন। পেয়ালার পর পেয়ালা আমিল খেয়ে একেই রানার প্রাণ খুলে গিয়েছিল, তার উপর দিল্লীর বাদশা তার কাছে যখন ক্ষমা চাইলেন, তখন র্তার মন একেবারে গলে গেল— রানা আদর > oケ