পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাজারের পর হাজার পাঠান এনেও চিতোরের একখানা পাথর পর্যন্ত দখল করতে পারলেন না ! শেষে, যে ভীমসিংহকে তিনি কাল রাত্রে লোহার শৃঙ্খলে বন্ধ রেখেছিলেন, সেই ভীমসিংহ যখন হাতির পিঠে যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হলেন, তখন পাঠান বাদশার আশা-ভরসা নিমূল হল । সন্ধ্যার অন্ধকারে অর্ধেক-ভারতবর্ষের সম্রাট আল্লাউদ্দীন চিতোরের সম্মুখ থেকে ঘোড়া ফিরিয়ে শিবিরে গেলেন। জয় ! জয় । রবে চিতোর নগর পরিপূর্ণ হল ! সেইদিন গভীর রাত্রে যুদ্ধ-শেষে রান ভীমসিংহ যখন পদ্মিনীর শয়ন-কক্ষে বিশ্রাম করতে এলেন, তখন রানার দুই চক্ষে জল দেখে পদ্মিনী জিজ্ঞাসা করলেন, "এ সুখের দিনে চক্ষে জল কেন ? রানা নিশ্বাস ফেলে বললেন, পদ্মিনী, আজ আমার পরম উপকারী চিরবিশ্বাসী গোর। চিরদিনের মতো যুদ্ধের খেলা সাঙ্গ করে, দেবলোকে চলে গেছে । দুজনে তার একটি ও কথা হল না ! রানী পদ্মিনী শমন-ঘরের প্রদীপ অন্ধকার করে দিলেন ; দক্ষিণের হাওয়ায় সারারাত্রি চিতোরের মহাশ্মশানের দিক থেকে যেন একটা হায়-হায়হায়-হায় শব্দ সেই ঘরের ভিতর ভেসে আসতে লাগল । আল্লাউদ্দীন যখন পদ্মিনীর আশায় চিতোর ঘিরে বসেছিলেন, সেই সময় কাবুল থেকে মোগলের দল একটু-একটু করে ক্রমেই ভারতবষের দিকে এগিয়ে আসছিল । রাজপুতের কাছে হার মেনে বাদশ নিজেৰ শিবিরে এসে শুনলেন– মোগল বাদশা তৈমুরলং দিল্লী আক্রমণ করতে আসছেন । সেই সঙ্গে দিল্লী থেকে পিয়ারী বেগমের এক পত্র পেলেন ; তার এক-জায়গায় বেগম লিখেছিলেন, শাহেনশা, আর কেন ? পদ্মিনীর আশা পরিত্যাগ করুন। হে মধুকর, তুমি পদ্মের সন্ধানে মরুভূমির মাঝে ফিরতে লাগলে, আর বনের ভালুক এসে তোমার সাধের মৌচাক লুটে গেল ? সকলি আল্লার ইচ্ছে! আজ অর্ধেক ভারতবর্ষের রাজা, কাল হয়তো পথের ভিখারী ! হায় রে হয়, দিল্লীর পিয়ারী বেগমকে এতদিনে বুঝি মোগল-দস্থ্যর বাদী হতে হল! বাদশ পিয়ারীর চিঠি পড়ে স্তম্ভিত > >Q