পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উঠে বসলেন ; কিন্তু সকাল হল তো পাখি ডাকে না কেন ? তবে ভ্রম হল নাকি ? হাম্বির বেশ করে চারিদিকে দেখতে লাগলেন । সেই সময় যেন দুজন মানুষে সেই শালগাছের তলায় কথা কইছে শোনা গেল ! লোক দুটোর কথা বোঝা গেল না কিন্তু দু-একবার মুঞ্জ ডাকাতের আর সুজন বাহাতুরের নাম বেশ স্পষ্ট শুনতে পেলেন । হাম্বির আস্তে-আস্তে গাছের ডাল বেয়ে খানিকট নেমে এসে কান পেতে শুনতে লাগলেন, তুই পাহাড়ীতে কথা হচ্ছে, ‘ওরে ভাই বদরী, তুই এখনো মুঞ্জ-মুঞ্জ বলিস, তাই তো সে চটে যায়।’ ‘মুঞ্জকে মুঞ্জ বলব না তো কী ? সে কি জানে না যে আমি তার চাচা হলেম ? ‘ওরে ভাই, সে কি এখনো চাচা-ফাচা মানে ? যে দিন থেকে সে সেই রাজপুতগুলোকে আর রানার ছেলেকে লড়ায়ে হারিয়ে দিয়েছে, সেইদিন থেকে তার মাথা লিগড়ে গেছে । সে এখন চায় আমরা তাকে রানা আর তার ছেলেকে কুমার বলি।’ 'রেখে দে তোর রানা, রেখে দে তোর কুমার। আমি তাদের চিরকাল বলব মুঞ্জ আর ভুঞ্জ । তবে ভাই রঞ্জ, আজ তুই লাচ দেখতে চলেছিস কেন ? সর্দার আজ মেয়ের বিয়েতে মেয়া খেয়ে নেশা করেছে— তোকে দেখলেই মাথা কাটতে আসবে ? ‘ওরে একি বলিদানের মোষ পেয়েছিস যে টক করে হড়িকাঠে মাথা দেব ? চল এখন নাতনির বিয়েতে একটু আমোদ করা যাক ; বাজে কথায় কেবল রাত কাটালি |’ লোক দুটো হন-হন করে উত্তর-মুখে। চলল। হাম্বির এতক্ষণে বুঝলেন, তিনি ডাকাতের আড্ডায় এসে পড়েছেন। দূর থেকে মাদল আর বর্ণঝরের হুমহুম ঝুমঝুম আওয়াজ অস্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। মশালের আলো আকাশের একদিক রাঙা করে তুলেছে। হাম্বির তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে সেই লোক দুটোর সঙ্গ নিলেন। 28 o