পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বুকের ভিতর কী বেদন নিয়ে চণ্ড যে সারারাত কাটিয়েছেন তাঁ আর কারে বুঝতে বাকি রইল না, তারা কোনো কথা না কয়ে চণ্ডকে প্রণাম করে বিদায় হলেন । চণ্ড তখন তার দাই-মাকে কাছে ডেকে চুপি-চুপি বললেন, ‘মকুলের যাতে ভালো হয়, তার কোনো বিপদ না ঘটে দেখবে ; আমার ছোটাে ভাই রঘুদেও কৈলোরে আছে, আমি তার সঙ্গে দেখা করে মাণ্ডুর রাজার কাছে চললেম। মহারানীকে বলবে যদি কোনোদিন কোনো বিপদ আসে, রাজ্যে যদি কোনো গোলমাল হয় তবে আমি কাছেই রইলেম, আমাকে ডেকে পাঠালেই আবার আসব ; আমার তলোয়ার মকুলের শত্রুর জন্যে আর মেবারের জন্যে আমার প্রাণ । দাই-মা, এর কি যাবার আগে মকুলকে একবার দেখতে দেবে না ? দাই ঘাড় নেড়ে চোখে আঁচল দিয়ে কাদতে লাগল ; চণ্ড বুঝলেন ছোটো ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার কোনো উপায় নেই ; তিনি একটি কথা না কয়ে যেমন সাজে ছিলেন তেমনি, কেবল তলোয়ারখানা কোমরে বেঁধে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে ঘোড় ছুটিয়ে বেরিয়ে গেলেন— তখন মাথার উপরে দুপুরের রোদ বা-বা করছে। মকুল যখন শিকার খেলতে যাবার সময় তার দাদাকে খুজতে লাগল, তখন রানী বললেন, তোর দাদাকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে, সে আর আসবে না ? সারাদিন মকুলের চোখ ছল-ছল করতে লাগল, সে শূন্ত রাজপুরীতে কোথাও তার দাদাকে খুজে পেলে না। রাত্রে যখন সবাই শুয়েছে তখন মকুল তার দাই-মা’র গলা জড়িয়ে বললে, "যে বাঘ দাদাকে মেরেছে তাকে আমি বড়ো হয়ে নিশ্চয়ই মারব ; তলোয়ারের এক চোটে তার মাথাটা কেটে এনে তোমায় দেব, কেমন ? দাই বললে, “রানাসাহেব, আমি সেই বাঘটা ধরবার একটা দড়ির শক্ত ফাদ কালই বানিয়ে রাখছি— বাঘটাকে কিছুতেই পালাতে দেওয়া হবে না ? ১৬২