পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেবলি ঘরের দিকে ফিরে চলতে চাইলেম ! মা কিন্তু আর সেদিকেও চাইলেন না— সোজা চললেন আকাশ যেখানে মাটিতে এসে মিলেছে, বরাবর সেই দিকেই চেয়ে । সন্ধ্যা হলে পথের ধারে, কোনো দিন গাছ তলায় কোনো দিন খোলা মাঠে মা আমাদের নিয়ে রাত কাটান। সকালে আবার চলতে আরম্ভ করেন। দুপুরে কোনো দিন কোনো গায়ে আসি, সেখানে যা ভিক্ষে পাই, তাই খাই ! কোনো দিন কিছু পাইও না, খাই ও না । এই ভাবে মা আমাদের চলেছেন— চিতোরের রানার দুঃখিনী কাঠকুড়োনি রানী ! কতকাল পথে পথে কাটল তার ঠিক নেই! সারা বর্ষা চলে গেল— ভিজতেভিজতে পথ চলতে চলতে! শীত এল। মাঠের দুরন্ত বাতাস রাতের বেলায় গায়ে যেন বরফ ঢেলে দিতে লাগল। ছেড়া কাথায় আমাদের জড়িয়ে নিয়ে মা সারারাত কাদতেন আর জাগতেন । আমাদের দুঃখিনী মা— রানী মা ! আমি এক-একদিন বলতেম, মা, ঘরে চলে। মা বলতেন, আর একটু গেলেই ঘর পাব । আমি সামনের দিকে চেয়ে দেখতেম, দূরে কেবল একটা ঝাপসা পাহাড়ের ঠাণ্ড নীল ঢেউ! মা, সেই নীলের দিকে চেয়ে চলতেন, আর এক-একবার র্তার চোখ দিয়ে ঝর-ঝর করে জল পড়ত । এমনি সে কত দিন, কত দূরে চলে একদিন আকাশে আজকেরই মতো বাদল লাগল, বাতাস বইল, বিদ্যুৎ চমকাল ; মেঘের ছায়া পড়ে সামনের পাহাড় সে দিন যেন কালো হয়ে কাছে এগিয়ে এসেচ্ছে বোধ হল ; মা আমার পথের ধারে চুপটি করে ঘুমিয়ে ছিলেন, নামি তাকে জাগিয়ে দিয়ে বললেম, মা চেয়ে দেখো পাহাড়ের উপর কত বড়ো বাড়ি । মা একবার চোখ মেলে দেখে বললেন, ওই আমার ঘর ! খানিক পরে আস্তে-আস্তে আমায় বুকের কাছে টেনে নিয়ে একটি সোনার হার আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘রাকে এইটে দেখাস, তিনি তোদের ঘরে ডেকে নেবেন।' বুড়ে চাচার চোখে জল ভরে উঠল। মেয়েটি বললে, “ণরপর ? কী হল ? কারো মুখে কথা নেই। অনেকক্ষণ পরে চাচা উত্তর չե Գ