পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শকুন্তলা মাটিতে মিশে ছিল, তাকে কত আদর করলেন, কত আশীৰ্বাদ করলেন। উপবনে দুই সখী যখন শুনলে শকুন্তলা শ্বশুরবাড়ি চলল, তখন তাদের আর আহলাদের সীমা রইল না। প্রিয়ম্বদা কেশর-ফুলের হার নিলে, অনসূয়া গন্ধ-ফুলের তেল নিলে ; দুই সখীতে শকুন্তলাকে সাজাতে বসল। তার মাথায় তেল দিলে, খোপায় ফুল দিলে, কপালে সিফুর দিলে, পায়ে আলতা দিলে, নতুন বাকল দিলে ; তবু তো মন উঠল না ! সখীর এ কি বেশ করে দিলে ? প্রিয়সখী শকুন্তলা পৃথিবীর রানী, তার কি এই সাজ ?— হাতে মৃণালের বালা, গলায় কেশরের মালা, খোপায় মল্লিকার ফুল, পরনে বাকল ?— হায়, হায়, মতির মালা কোথায় ? হীরের বালা কোথায় ? সোনার মল কোথায় ? পরনে শাড়ি কোথায় ? বনের দেবতারা সখীদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করলেন। বনের গাছ থেকে সোনার শাড়ি উড়ে পড়ল, পায়ের মল বেজে পড়ল । বনদেবতারা পলকে বনবাসিনী শকুন্তলাকে রাজ্যেশ্বরী মহারানীর সাজে সাজিয়ে দিলেন । তারপর যাবার সময় হল । হায়, যেতে কি পা সরে, মন কি চায় ? শকুন্তলা কোনদিকে যাবে— সোনার পুরীতে রানীর মতে রাজার কাছে চলে যাবে ?— না, তিন সখীতে বনপথে আজন্মকালের তপোবনে ফিরে যাবে ? এদিকে শুভলগ্ন বয়ে যায়, ওদিকে বিদায় আর শেষ হয় না, কুঞ্জবনে মল্লিকা মাধবী কচি-কচি পাতা নেড়ে ফিরে ডাকছে, মা-হারা হরিণশিশু সোনার আঁচল ধরে বনের দিকে টানছে, প্রাণের দুই প্রিয়সখী গলা ধরে র্কাদছে । একদণ্ডে এত মায়া এত ভালোবাসা কাটানো কি সহজ ? মা-হারা হরিণশিশুকে তাত কশ্বের হাতে, প্রিয় তরুলতাদের প্রিয়সখীদের হাতে সঁপে দিতে কত বেলাই হয়ে গেল । 〉&