পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পোকার সর্দার তুই লম্বা-লম্বা ঠ্যাং নেড়ে বলছে, "ওই আসছে চি চি ঘোড়া চিচি ! ফিরে দেখি গোরের ভিতর থেকে ঘোড়া-ভূত মুখ বার করে পালকির দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে ! ওঠ রে পালকি, পালা রে পালা! আর পালা ! ঘোড়া ভূত তাড়া করেছে –ঘাড় বেঁকিয়ে, নাক ফুলিয়ে আগুনের মতো দুই চোখ পাকিয়ে ! ভয়ে তখন ভূতপতরীর লাঠির কথা ভুলে গেছি। কেবল ডাকছি। —জগবন্ধু, রক্ষে করে, মাসিকে বলে তোমায় খইয়ের মোয়া ভোগ দেব। বলতেই আমার খুটে বাধা খইগুলি রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে। মাসির বাড়ির খই —জুইফুলের মতো ফুটন্ত ধবধব করছে খই– রাস্ত যেন আলো করে। ঘোড়া-ভূত কি সে-লোভ সামলাতে পারে ? খই খেতে অমনি দাড়িয়ে গেছে। বেচারা ঘোড়া-ভূত খই খেতে মুখটি নামিয়েছে কি, অমনি তার ভূতুড়ে নিশ্বাসে খইগুলি উড়ে পালাচ্ছে! যেমন খইয়ের কাছে মুখ নেওয়া অমনি খই উড়ে পালায় । খইও ধরা দেয় না, ঘোড়াও ছাড়তে চায় না । ঘোড়াভূত চায় খই খায়, খই কিন্তু উড়ে-উড়ে পালায়। ঘোড়া চলেছে খইয়ের পিছে, খই উড়েছে বাতাসের আগে, আমি চলেছি পালকিতে বসে ঘোড়া-ভূতের ঘোড়দৌড় দেখতে মুখ বাড়িয়ে । কখন যে মাঠে এসে পড়েছি মনেই নেই। সেখানটায় বড়ো অন্ধকার, বড়ো হাওয়া –যেন ঝড় বইছে। মাসির দেওয়া একটি লণ্ঠনের মিটমিটে আলো অনেকক্ষণ নিভে গেছে। অন্ধকারে আর ঘোড়াও দেখা যায় না, খই ও চেনা যায়ন । বেহারাদের বলি –আলো জালো ; কিন্তু হাওয়ায় কথা উড়ে যায় ; কে শোনে কার কথা ! এমন হাওয়া তো দেখিনি! আমার ভূতপতরীর লাঠিটা পর্যন্ত উড়ে পালাবার যোগাড়। লণ্ঠনটি তো গেছে, শেষে লাঠিটাও যাবে ? আচ্ছা করে লাঠি ধরে বসে আছি। বাতাসের জোর ক্রমেই বাড়ছে। সর্বনাশ ! এ যে দেখছি বীর-বাতাস ! এ বাতাসের মুখে পড়লে তো রক্ষে থাকবে না –পালকিযুদ্ধ আমি, আমার লাঠি, আমার ছাতা, ধুতি-চাদর, পোটলা-পুটলি, বিছানা-বালিশ কাগজের টুকরোর ૨૨ જ