পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার দিকে চেয়ে বলছে, দেখছ কী ? বড়ো আমোদ হচ্ছে, না ? বুড়োমানুষের গায়ে খোচা দিয়ে রক্তপাত করে আবার বসে-বসে তামাশা দেখছ, লজ্জা নেই! যাও না, ছাড়া পেয়েছ তো নিজের কাজে যাও না ? আমি বললুম, যেতে পারলে তো ! পালকি-বেহার নেই যে ! তারা আমুক তবে যাব।’ শুনে বুড়ো হো-হো করে হেসে বললে, ‘কেন পা নেই নাকি ? হেঁটে যেতে পারো না ? নবাব হয়েছ ? আমার ভারি রাগ হল । বুড়োব বড়শির আঁচড়ে দুই পা ছিড়ে তখনো আমার ঝরঝর রক্ত পড়ছে । আমি রেগে বললাম, পা ফুটে কি আর রেখেছ । আঁচড়ের চোটে দফা শেষ করেছ যে ’ 'লেগেছে নাকি ? বলে বুড়ে খানিক চুপ করে বললে, একটু দই দাও, সেরে যাবে।” আমি বললুম, এই মাঠের মধ্যে দই ! তামাশা করছ নাকি ? ‘আচ্ছ। তবে খানিক তেঁতুল-বাটা হলেও চলতে পারে। আমার হাসি পেল। নিশ্চয় বুড়োটা ঘুমের ঘোরে স্বপন দেখছে। বলি, ও দাদা ! এখানে তুমি ছাড়া তো গাছ দেখছি নে, আরেকবার লাঠির খোচা দিয়ে তোমার গা থেকে তুধ বার করে নিয়ে দই পাতব নাকি ? বলেই ভূতপত্রী লাঠিটা যেমন একটু বাগিয়ে ধরেছি, অমনি বুড়ে বলছে, ‘রও রও, করো কী দাদা ! বুড়োমানুষ কখন কী বলি, রাগ কোরো না । আমরা মনসাদেবীর বরে চিরকাল নানারকম স্বপন দেখি । এইখানটিতে কতকাল যে বসে আছি তার ঠিক নেই। ছিপ নিয়ে মাছ ধরছিলুম জলের ধারে –আজ সে কত কালের কথা ; সে নদী শুকিয়ে জল সরে চড়া পড়ে গেছে, কিন্তু এখনো ঝোক কাটেনি ; মনে হচ্চে নদীর ধারেই বসে মাছ ধরছি ! আমার বেশ মনে পড়ছে এইখানেই একঘর গয়লা থাকত আর ঠিক তাদের ঘরের কোণে একটা মস্ত তেঁতুলগাছ ছিল, এখন তবে সেগুলো গেছে ? বলেই বুড়ো ঝিমিয়ে পড়ে দেখে আমি তাকে ९९२