পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঠেকছে, আবার সড়সড় করে নেমে আসছে! আমি আর না-রাম না-গঙ্গা ! কাঠ হয়ে পড়ে আছি কেবল ছুটি চোখ চাদরের একটি কোণ দিয়ে বের করে। দেখছি আলোটা ক্রমে এ-গাছ সে-গাছ করে ঘুরে বেড়াতে লাগল ; তারপর আস্তে-আস্তে মাটিতে নেমে এল । সেই সময় দেখি পূর্ণিমার চাদের মতো প্রকাণ্ড একটা কাচের গোলা মাঠের ওপর দিয়ে বেঁ-বো করে গড়িয়ে আসছে— যেন একটা মস্ত আলোর ফুটবল ! তালগাছের তলায় যে আলোটা টিপ-টিপ করছিল সেটা জোনাকি-পোকার মতো উড়ে গিয়ে সেই গোলাটার ওপর বসল। বসেই গোলাটাকে আমার দিকে গড়িয়ে আনতে লাগল ! গেছি, পালকিযুদ্ধ গোলাটার ভেতরে ঢুকে গেছি। হাড়ির ভেতরে মাছের মতো আর পালাবার জো নেই। একেবারে গড়িয়ে চলেছি– বনবন করে লাঠিমের মতো ঘুরতে-ঘুরতে। সে কী ঘুরুনি ! মনে হল, আকাশ ঘুরছে, তারা ঘুরছে, পৃথিবী ঘুরছে, পেটের ভেতর আমার মাসির মোয়াগুলোও যেন ঘুরতে লেগেছে! কখনো মাঠের ওপর দিয়ে, কখনো গাছের মাথা ডিঙিয়ে, গোলাটা শাদা খরগোশের মতো লাফিয়ে, গড়িয়ে, কখনো জোরে, কখনে আস্তে আমাকে নিয়ে ছুটে চলেছে ! ভয়ে দুই হাতে চোখ ঢেকে চলেছি। ক্যা-র্কে চরকা-কাটার শব্দ শুনে চোখ খুলে দেখি এক বুড়ি স্থতে কাটছে আর একট। খরগোশ তার চরকা ঘুরোচ্চে। বুড়িকে দেখেই চিনেছি, সেই আদ্যিকালের বদ্ভিাবুড়ি, যে চাদের ভেতরে বসে থাকে! আর ওই তার চরকা, ওই খরগোশ ! আঃ বাচা গেল, এটা তবে গোলাভূত নয়! ইনিই আমাদের চাদামামা, আর বুড়ি তো আমাদের মামি ! আর এ খরগোশ তো আমাদের সেই খাচার খরগোশটি, বিলিতি ইদুরের আর গিনিপিগগুলির বড়োমামা! ‘বলি মামি, এমন করে কি ভয় দেখাতে হয় ’ বলেই আমি খরগোশটাকে খপ করে কোলে তুলে নিয়েছি। ૨૨૭