পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নেই, কালও হয় কিনা সন্দেহ। তোমায় একটি কথা বলে যাই— জাহাঙ্গিরকে একটু সাবধান হয়ে সমঝে চলতে বোলো, নইলে তোমার শ্বশুর তাকে ত্যাজ্যপুস্তুর করবেন বলেছেন। তোমার শ্বশুর আমাকে এই পাথরের খেলনাগুলো দিয়েছেন ; এগুলো তুমি নিয়ে খেলা কোরো, আমি এ-সব নিয়ে কী করব ? এখন তবে আসি ’— বলে আমি আবার সতরঞ্চি চালিয়ে দিলুম। মমুরটাকে আমি গাধা বলি, কিন্তু সে একেবারে নিবুদ্ধি নয়। এরই মধ্যে সে জাহাঙ্গিরের ভিণ্ডিখানা থেকে পোয়াটাক খাস অম্বুরী তামাক জোগাড় করেছে। মসুরটাকে বাহাদুরি দিতে হবে। কিসে আমার কষ্ট না হয় সেদিকে তার খুব নজর আছে। ভোর নাগাদ একটু চোখ বুজেছি কি না অমনি মসুর ‘হুজুর, দেখুন ! দেখুন ! বলে ঠেলে তুলেছে। দেখছি ডানা উঠলে পিপড়েগুলো যেমন মাটি ছেড়ে ঘুরে-ঘুরে আকাশের দিকে ওঠে, তেমনি দলে-দলে ষাড় হু হু করে উত্তর দিকে উড়ে চলেছে, আর দক্ষিণ দিকে কেবল গাধা টঙ্গস-টঙ্গস করে লাফাতে-লাফাতে চলেছে । এ কী আশ্চর্য ব্যাপার! এত গোরু, এত গাধা আসে কোথা থেকে ? দূরবীনটা চোখে লাগিয়ে দেখছি একটা নদী আধখানা চাদের মতো বেঁকে চলেছে তারই দুই পারে দুই শহর ; একটা শহরে কেবল হিছদের মঠ আর মন্দির, পূজারি পাণ্ডা গুণ্ডা আর সন্ন্যাসীর আডড, আর-একদিকে কেবল যত মোটা-মোট লক্ষপতি ক্রোড়পতি— তাদের বড়ো বড়ো মোটা-মোটা থাম-দেওয়া বাড়ি আর যত টিকিধারী সভাপণ্ডিতের বাসা ! এই দুই শহরের মাঝে হুটো বড়ো-বড়ো চিতা জালানো রয়েছে, আর শহরের যত লোক দিনরাত কাঠের বোঝা, তেলের কুপো এনে সেই চিতায় ঢালছে। যেমন এক-একবার আগুন দাউ-দাউ করে জ্বলে উঠছে আর অমনি লোকগুলো তাতে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে আর আমনি একদল গোরু হয়ে বেরোচ্ছে, আর অন্য দল গাধা হয়ে দৌড় দিচ্ছে । २8b”