পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সন্ন্যাসীর দল হুঙ্কার দিয়ে উঠে দাড়ালেন। নালক চেয়ে দেখল সকাল হয়েছে । আর কিছু দেখা যায় না! সেদিন থেকে নালক যখনি ধ্যান করে তখনি দেখে সূর্যের আলোয় আগুনের মতো ঝকঝক করছে— আকাশের নীল ঢেকে, বাতাসের চলা বন্ধ করে— সোনার-ইটেবাধানো প্রচণ্ড প্রকাণ্ড এক সোনার দেয়াল । তার শেষ নেই, আরম্ভও দেখা যায় না । নালকের মন-পাখি উড়ে-উড়ে চলে আর সেই দেয়ালে বাধা পেয়ে ফিরে-ফিরে আসে । এমনি করে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কাটছে । সোনার দেয়ালের ওপারে রয়েছেন সিদ্ধার্থ আর এপারে রয়েছে নালক— যেন খাচার পাখি আর বনের পাখি । ছেলে পাছে সন্ন্যাসী হয়ে চলে যায় সেই ভয়ে রাজা শুদ্ধোদন সোনার স্বপন দিয়ে, হাসি আর বঁাশি, আমোদ আব আহলাদের মায়া দিয়ে সিদ্ধার্থকে বন্ধ রেখেছেন– সোনার খাচায় পাখিটির মতো । যখন গরমের দিনে রোদের তেজ বাড়ে, জল শুকিয়ে যায়, তপ্ত বাতাসে চারিদিক যেন জ্বলতে থাকে ; বর্ষায় যখন নতুন মেঘ দেখা দেয় জলের ধারায় পৃথিবী ভেসে যায়, নদীতে স্রোত বাডে , শরতের আকাশ যখন নীল হয়ে ওঠে, শাদা মেঘ পাতলা হাওয়ায় উড়ে চলে, নদীর জল সরে গিয়ে বালির চড়া জেগে ওঠে, শীতে যখন বরফে আর কুয়াশায় চারি দিক ঢাকা পড়ে, পাতা খসে যায়, ফুল ঝবে যায় ; আবার বসন্তে যখন ফুলে ফুলে পৃথিবী ছেয়ে যায়, গন্ধে আকাশ ভরে ওঠে দখিনে বাতাসে চাদের আলোয়, পাখির গানে আনন্দ ফুটে-ফুটে পড়তে থাকে— তখন খাচার পাখির মন যেমন করে, সোনার দোয়ালে ঘেরা রাজমন্দিরে বুদ্ধদেবেরও মন তেমনি করে— এই সোনার খাচা ভেঙে বাইরে আসতে । তিনি যেন শোনেন – সমস্ত জগৎ, সারা পুথিবী গরমের দিনে, বাদলা রাতে, শরতের সন্ধ্যায়, শীতের সকালে, বসন্তের পহরে-পহরে— কখনো কোকিলের কুহু, কখনো বাতাসের হুহু, কখনো বা বিষ্টির ঝর-ঝর, "ఏఆ