পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মায়া-জালে-ঘেরা সোনার-স্বপনে-মোড়া ঘরখানিতে আর বঁাধ রইল না । সে উদাসী হয়ে চলে গেল— ঘর ছেড়ে চলে গেল— কত অনামা নদীর ধারে-ধারে কত অজানা দেশের পথে-পথে— একা নির্ভয় । সন্ধ্যাতারার সঙ্গে-সঙ্গে ফুটন্ত ফুলের মতো নতুন ছেলের কচি মুখ, নতুন মা হয়েছেন সিদ্ধার্থের রানী যশোধরা— তার সুন্দর মুখের মধুর হাসি, সহচরীদের আনন্দ গান, কপিলবাস্তুর ঘরে-ঘরে সাত রঙের আলোর মালা— কিছুতেই আর সিদ্ধার্থের মনকে সংসারের দিকে ফিরিয়ে আনতে পারলে না— সে রইল না, সে রইল না। ছেলে হয়েছে ; এবার সিদ্ধার্থ সংসার পেতে ঘরে রইলেন— এই ভেবে শুদ্ধোদন নতুন ছেলের নাম রাখলেন রাহুল। কিন্তু সিদ্ধার্থের মন সংসারে রইল কই ? রাহুল রইল, রইল রাহুলের মা যশোধরা, পড়ে রইল ঘরবাড়ি, বন্ধুবান্ধব। আর সব অঁাকড়ে পড়ে রইলেন রাজা শুদ্ধোদন, কেবল চলে গেলেন সিদ্ধার্থ— তার মন যে-দিকে গেছে । সেদিন আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা। রাত তখন গভীর। রাজপুরে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আলো নিবিয়ে গান থামিয়ে সিদ্ধার্থ ডাকলেন– “ছন্দক, আমার ঘোড়া নিয়ে এসো (’ সিদ্ধার্থের চরণের দাস ছন্দক, কণ্ঠক ঘোড়াকে সোনার সাজ পরিয়ে অর্ধেক রাতে রাজপুরে নিয়ে এল। সিদ্ধার্থ সেই ঘোড়ায় চড়ে চলে গেলেন— অনামা নদীর পারে । পিছনে অন্ধকারে ক্রমে মিলিয়ে গেল— কপিলবাস্তুর রাজপুরী, সামনে দেখা গেল— পূর্ণিমার আলোয়আলোময় পথ ! ছন্দক চলেছে, কপিলবাস্তুর দিকে, সিদ্ধার্থের মাথার মুকুট, হাতের বালা, গলার মালা, কানের কুণ্ডল আর সেই কণ্ঠক ঘোড়া নিয়ে ; আর সিদ্ধার্থ চলেছেন পায়ে হেঁটে, নদী পার হয়ে, বনের দিকে তপস্যা করতে— দুঃখের কোথা শেষ তাই জানতে । ছোটো নদী— দেখতে এতটুকু, নামটিও তার নমা ; কেউ বলে ●●*