পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছিল, ঘোরতর তপস্তায় সব একে-একে নষ্ট হয়ে গেল। তাকে দেখলে মানুষ বলে আর চেনা যায় না— যেন একটা শুকনো গাছের মতো দাড়িয়ে আছেন। এমনি করে অনেকদিন কেটে গেছে। সেদিন নতুন বছর, বৈশাখ মাস, গাছে-গাছে নতুন পাত, নতুন ফল, নতুন ফুল, উরাইল বনে যত পাখি, যত প্রজাপতি, যত হরিণ, যত ময়ুর সব যেন আজ কিসের আনন্দে জেগে উঠেছে, ছুটে বেড়াচ্ছে, উড়ে-উড়ে গেয়ে-গেয়ে খেলে বেড়াচ্ছে । সিদ্ধার্থের পাচ শিষ্য শুনতে পাচ্ছেন খুব গভীর বনের ভিতরে যেন কে-একজন একতারা বাজিয়ে গান গাইছে । সারাবেলা ধরে আজ অনেকদিন পরে শিষ্যেরা দেখছেন সিদ্ধার্থের স্থির ছুটি চোখের পাতা একটু-একটু কঁপিছে— বাতাসে যেন শুকনো ফুলের পাপড়ি। বেলা পড়ে এসেছে ; গাছের ফঁাক দিয়ে শেষ বেলার সি তুর-আলো নদীর ঘাট থেকে বনের পথ পর্যন্ত বিছিয়ে গেছে – গেরুয়া-বসনের মতো। একদল হরিণ বালির চড়ায় জল খেতে নেমেছে, গাছের তলায় একটা ময়ুর ঠাণ্ড বাতাসে আপনার সব পালক ছড়িয়ে দিয়ে সন্ধ্যার আগে প্রাণ-ভরে একবার নেচে নিচ্ছে । সেই সময় সিদ্ধার্থ চোখ মেলে চাইলেন— এতদিন পরে আজ প্রথম তিনি যোগাসন ছেড়ে নদীর দিকে চললেন। শিষ্যেরা দেখলেন, তার শরীর এমন দুর্বল যে তিনি চলতে পারছেন না। নদীর পারে একটা আমলকী গাছ জলের উপর বুকে পড়েছিল, সিদ্ধার্থ তারি একটা ডাল ধরে আস্তে-আস্তে জলে নামলেন। তারপর অতি কষ্টে জল থেকে উঠে গোট কয়েক আমলকী ভেঙে নিয়ে বনের দিকে চলবেন আর অচেতন হয়ে নদীর ধারে পড়ে গেলেন । শিন্তেরা ছুটে এসে তাকে ধরাধরি করে আশ্রমে নিয়ে এল। অনেক যত্নে সিদ্ধার্থ সুস্থ হয়ে উঠলেন। কৌণ্ডিন্য প্রশ্ন করলেন— ‘প্রভু, দুঃখের শেষ হয় কিসে জানতে পারলেন কি ? সিদ্ধার্থ ঘাড় নেড়ে বললেন, ‘না— এখনো না ’ অন্য চার শিষ্য, তারা বললেন– ‘প্রভু, তবে আর ৩১২