পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিজের নামে, একটি ভায়ের নামে, একটি মায়ের নামে, একটি বাপের নামে, একটি মোড়লদাদার নামে সেই বটগাছের তলায় সাজিয়ে রাখছে। বিকেলবেলার সোনার আলো বটগাছটির তলাটিতে এসে লেগেছে। রোদে-পোড়া বালির চড়ায় জলের দাগ টেনে বয়ে চলেছে অঞ্জনা নদীটি। ওপারে দেখা যাচ্ছে অনেক দূর পর্যন্ত ধানের খেত, আর মাঝে-মাঝে আম-কঁঠালের বাগান-ঘেরা ছোটো-ছোটো গ্রামগুলি ! মাটির ঘর, খড়ের চাল, একটা পাহাড়— সে কত দূরে দেখা যাচ্ছে মেঘের মতো। নদীর ওপারেই মেঠো রাস্তা— সবুজ শাড়ির শাদা পাড়ের মতো সরু, সোজা। সেই রাস্তায় চাষার মেয়েরা চলেছে ঘাসের বোঝা মাথায় নিয়ে । তাদের পরনে রাঙা শাড়ি, হাতে রুপোর চুড়ি, পিঠের উপর ঝুলি-বাধা কচি ছেলেটি ঘুমিয়ে আছে হাত-তুটি মুঠো করে। একটুখানি ঠাণ্ড বাতাস নদীর দিক থেকে মুখে এসে লাগল। একটা চিল অনেক উচু থেকে ঘুরতে-ঘুরতে আস্তে-আস্তে একটা গাছের ঝোপে নেমে গেল । পুন্না দেখছে, বেলা পড়ে এসেছে। বালির উপর দিয়ে চলে আসছে অনেকগুলো কালো মোষ— একটার পিঠে মস্ত-এক-গাছ লাঠি-হাতে বসে রয়েছে গোয়ালাদের ছেলেটা । সে রোজ সন্ধ্যাবেল মোষের পিঠে চড়িয়ে পুল্লাকে মোড়লদের বাডি পৌছে দেয় । আজও তাই আসছে। অনেক দূর থেকে সে ডাক দিচ্ছে 'আরে রে পুন্না রে!” ছেলেটার নাম সোয়াস্তি । পুন্না তার গলা পেয়েই তাড়াতাড়ি পিদিম-পাচটা জালিয়ে দিয়েই যেদিক দিয়ে সোয়াস্তি আসছিল সেইদিকে চলে গেল । তখন একখানি সোনার থালার মতো পুবদিকে চতুর্দশীর চাদ উঠেছে। পুন্না আর সোয়াস্তি মোষের পিঠে চড়ে বালির চড়া দিয়ে চলেছে। উচু পাড়ের পর বটতলাতে ঝিকঝিক করছে পুল্লার-দেওয়া পিদিমের আলো । সেই আলোয় সোয়াস্তি, পুন্না দুজনেই আজ স্পষ্ট দেখলে গেরুয়া-বসন-পরা দেবতা এসে গাছের তলায় বসেছেন —পাথরের বেদীটিতে ! טיכסו