পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তখন আষাঢ় মাস। বেলা শেষ হয়েও যেন হয় না, রোদ পড়েও যেন পড়তে চায় না । সারনাথের মন্দিরে সন্ধ্যার শাখ-ঘণ্টা বাজছে, কিন্তু তখনো আযঢ়ন্ত বেলার সোনার রোদ গাছের মাথায় চিকচিক করছে, হরিণগুলো তখনো আস্তে-আস্তে চরে বেড়াচ্ছে, ছোটো-ছোটো সবুজ পাখিগুলি এখনো যেখানটিতে একটুখানি রোদ সেইখানটিতে কিচমিচ করে খেলে বেড়াচ্ছে। একলাটি বসে নালক বর্ষাকালের ভরা নদীর দিকে চুপ করে চেয়ে রয়েছে। একটা শাদা বক তার চোখের সামনে দিয়ে কেবলি নদীর এপার-ওপার আনাগোন। করছে— সে যেন ঠিক করতে পারছে না কোন পারে বাসা বঁধবে। বর্ষাকালের একটানা নদী আজ সারাদিন ধরে নালকের মনটিকে টানছে— সেই বর্ধনের বনের ধারে, তাদের সেই গায়ের দিকে ! সেই তেঁতুলগাছে ছায়া-করা মাটির ঘরে তার মায়ের কাছে নালকের মন একবার ছুটে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে। মন তার যেতে চাচ্ছে মায়ের কাছে, কিন্তু ঋষিকে একলা রেখে আবার যেতেও মন সরছে না। সে ওই বকটার মতো কেবলি যাচ্ছে আর আসছে, আসছে যার যাচ্ছে ! দেবলঋষি নালককে ছুটি দিয়েছেন তার মায়ের কাছে যেতে। এদিকে আবার ঋষির মুখে নালক শুনেছে বুদ্ধদেব আসছেন এই ঋষিপত্তনের দিকে । আজ সে-কত-বছর নালক ঘব ছেড়ে এসেছে ; মাকে সে কতদিন দেখেনি! অথচ বুদ্ধদেবকে দেখবার সাধঢুকু সে ছাড়তে পারছে না । সে একলাটি নদীর ধারে বসে ভাবছে— যায় কি না-যায়। সকাল থেকে একটির পব একটি কত নেীকো কত লোককে যার-যার দেশে নামিয়ে দিতে-দিতে চলে গেল ! কত মাঝি নালককে যাবে গো ! যাবে গো ’ বলে ডেকে গেল ! সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আর একখানি মাত্র ছোটো নীেকে নালকের দিকে পাল তুলে আসছে- অনেকদূর থেকে। তার আলোটি দেখা যাচ্ছে— জলে একটি ছোটাে পিদিম বিক-বিক করে ভেসে চলেছে। এইখানি চলে গেলে এদিকে আর নেীকে আসবে না । নালক মনে O38