কামিনীকুলের কবরীস্থিত শেফালিকা কুসুমের ভঙ্গজনিত মর্মর ধ্বনির স্তায় শ্রীতিগোচর হইতেছে কি না । দীপালী নিভিল । রাজরাজহুর্যের দগ্ধ ললাটে দ্রোহ এবং দহনের দীপালী নিভিল । বীণার সব কটা সোনার তার সোনার স্বপ্নের সঙ্গে সঙ্গেই কাটিয়া গেল ; এখন কেবল অতি পুরাতন একটি মাত্র জীবনতন্ত্রী বক্ষপঞ্জরের পর্দায় পর্দায় ঘা দিয়া বাজিতে লাগিল— “আমি কে ! কে আমাকে পরাজিত করিয়াছে ! আমি কোথায় ! আমার অনুচর কে । আমি রাজ্যভ্রষ্ট ; আমার পত্বিগণ দগ্ধ হইয়াছে ; পুত্র নিরুদ্দেশ ; একাকী বন্ধুবিরহিত পাথেয়বিহীন রাজা আজ ভিক্ষুকের অঙ্গনে লুটিতেছি।” নিরুদ্দেশ পুত্রের নিধন সংবাদের সঙ্গে সঙ্গেই পলাতক রাজার উদ্দেশে গুপ্ত ঘাতকের দল ভিক্ষুকের অঙ্গনে আসিয়া যখন পৌছিল তখন আর রাজা নাই— একটি মাত্র আজন্ম সেবকের সম্মুখে বসিয়া এক উন্মাদ কর্কশকণ্ঠে গান ধরিয়াছে— “আমি গগনে চিত্র রচনা করিব, মৃণালতন্তুতে বস্ত্র বয়ন করিব, স্বপ্নদৃষ্ট স্বর্ণ সংগ্রহ করিব, হিমের প্রাকার নির্মাণ করিব।” হর্ষের ছিন্নমুণ্ড লইয়া ঘাতকের দল যখন রাজপথে নৃত্য করিতে করিতে চলিল তখন উদয় শিখর হইতে নীল আকাশ জুড়িয়া রক্তরেখার পরে রক্তরেখা আসিয়া পড়িয়াছে— অস্তশিখর পাংশু এবং মান হইয়া গেছে । ৩৫২