পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরিয়া সে বনলতাটি আপনার নবকোমল জীবনবৃন্ত দিয়া বাংলার রাজধানী গৌড়ের জীর্ণ কঙ্কালটা জড়াইয়া ধরিয়া, সেন-রাজত্বের চিতাসজ্জার উপরে এক বাদল-দিনের কাজল আলোয় নিজেকে প্রথম বিকশিত করিয়া তুলিয়াছিল ; এবং সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হইতে আসিয়া এক বিদেশী, গহনে গভীরে— বিরাট অরণ্যের অন্ধতম স্তব্ধতার মাঝখানে, জনশূন্ত গৌড় জনপদের পরিত্যক্ত রাজপুরে, পাষাণ-শয্যাশায়িতা সেই বনলক্ষ্মীকে প্রথম সন্ধান করিয়া বাহির করিয়াছিলেন ; এইরূপ একটা নবন্যাসের টুকরায়, মনের সহজ অবস্থায়, বিচলিত হইবার কারণ ছিল না। কিন্তু সেদিন বর্ষার প্রভাতে, একটা মুখস্পর্শ শীতলতার মাঝখানে নিজেকে টানিয়া লইয়া, কলিকাতার গলির মাঝে আমাদের বাগানখানির সুগভীব শু্যামলতায় সম্পূর্ণ ডুব দিয়া আমি এক বসিয়াছিলাম ; এবং বৃষ্টিজলে সতেজ পুষ্পপল্লবের বিপুলতার উপরে দিনের উন্মেষ, ও বাগানের একটি গোপন কোণ হইতে নব বর্ষায় সদ্য প্রস্ফুটিত গৌড়ি ফুলের মুহু গন্ধ আমায় একটা স্বপ্ন দিয়া বেষ্টন করিয়া ধরিয়াছিল। এই অবস্থায় সেদিন যাহা কতকটা দেখিয়াছিলাম, কতকটা বা শুনিয়াছিলাম তাহা এই— পিতা আমার গৌড়-রাজবংশের শেষ বংশধর । ইতিহাস র্তাহাকে জানে না। গৌড়ের রাজসিংহাসন হইতে বিচ্যুত হইবার পর, ছৰ্দশ হইতে তুর্দশায়, দুঃখ হইতে দৈন্তে, অনন্যসাধারণ রাজমহিমার গৌরবশিখর হইতে অনাড়ম্বর একটা সাধারণ পরিসমাপ্তির মাঝে কবে যে পিতা আমার ধূলিধূসর, হীনতায় মলিন, অবজ্ঞা ও অবমাননায় বিশীর্ণ জীবনের ছিন্ন কস্থা বহন করিয়া আপনাকে বিলুপ্ত করিয়া দিয়াছিলেন তাহাও কেহ জানে না । আমি সেই দরিদ্র পিতার একমাত্র দুহিতা গৌরী। \949