পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাদের রানী— সে একটি কচি মেয়ে— নীচ জাত। কেউ তাদের চায় না, তাই কেউ যেদিকে যায় না সেইদিকে তারা একলা আছে— একটি প্রকাণ্ড কল্পতরু হেলে পড়ে সমুদ্রের নীল জলের উপরে ছাওয়া দিয়েছে— তারই তলায়। ছোটো জাত, কাজেই রাজবাড়ির সাত তলার একটি তলাতেও তাদের জন্যে জায়গা নেই। দেশের লোকের পায়ের ধুলো-কাদা ধুয়ে নেবার জন্যে রাজার দেউড়িতে দুবেল হাজির থাকবার হুকুমটাও না । যদিও দেশমৃদ্ধ সবাইকে তারাই কিন্তু বরাবর বছরে বছরে নিয়মিত বাগানের খাটি পদ্মমধু জুগিয়ে আসছে । এই-যে কল্পতরু যার পাতা কখনো খসে না, ফুল কখনো ঝরে না, এরই উপরে একটি পাখি । সে যে কী পাখি কেমন পাখি তা তো বলা যায় না— কিন্তু তার গান— সে যে স্বর্ণের কিন্নরীদের গানের চেয়ে মিষ্টি । সমুদ্রের এপারে গাইছে সে পাখি, সমুদ্রের ওপার পর্যন্ত তার সুর গিয়ে ঠেকছে—চাদনি রাতের আলোর মতো বাতাসের ঢেউয়ের উপর দিয়ে। মাঝি মাঝ-সমুদ্রে জাহাজ থামিয়ে সে গান শুনে গেল, ওপারের লোক সমুদ্রের ধারে দিনের পর দিন কাতার দিয়ে দাড়িয়ে সে গান শুনে মশগুল হয়ে রইল, আর সে গানের কত তারিফ করে তারা বই লিখলে, বর্ণনা দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিলে সেই চমৎকার আশ্চর্য পাখির কথা ; অথচ সেই ছোটো মেয়েটি আর তার দলের লোক ছাড়া বাগানের মালিক যিনি তিনিও জানেন না, বাগানের মালী যারা তারাও জানে না, হুজুরের সভাসদ পরিষদ লোক-লস্কর পরিবার প্রজা কেউ জানে না এই আশ্চর্য পাখির খবর— যার গানের কাছে সেই চমৎকার বাড়িখানা, সেই অদ্ভুত বাড়িখানা, সেই অদ্ভূত বাগানটিও কিছুই নয়। চট দিয়ে মোড়া গালামোহর-করা একরাশ বই আজ অনেকদিন হল বিদেশ থেকে হুজুরের তাকিয়ার কাছেই পড়ে আছে— সময় নেই যে তিনি সেগুলো খুলে দেখেন। সেদিন বেলা দুপুরে একটা মশা হঠাৎ কানের কাছে হুল ফুটিয়ে হুজুরের ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে। 'ENుe