পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হিনীবাদের কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাণিজ্যে আর গল্পসংগ্রহে । ক্রমে সিন্দবাদের ফিরে আসা আর যাওয়ার শেষ নেই এই বিশ্বাসই হিন্দবাদের মনে খুব শক্ত হয়ে বসে গেল। সেই সময় একদিন হঠাৎ সিন্দবাদ চুপি চুপি কাউকে কিছু না জানিয়ে একটা ভাঙা জাহাজে একেবারে গল্পের দেশের শেষ দেখতে বেরিয়ে পড়েছে, হিন্দবাদ এর কিছুই জানে না ; সে বছরের শেষে গল্প শুনতে সিন্দবাদের দরজায় এসে মোটের ঝুড়িট নামিয়ে বসল। ’ তখনো রাত ফরসা হয় নি, বোগদাদের রাস্তার পাথরগুলো হিমে ঠাগু হয়ে আছে, দোকান পাট সমস্ত বন্ধ, সরু গলির শেষটাতে নীল সমুদ্রের মতো একটা অন্ধকার, আর কিছু নেই– সাড়া নেই, শব্দ নেই, আলো নেই। হিন্দবাদ সিন্দবাদের দরজায় হিম পাথরের চাতালে ঝুড়ির উপরে মাথা রেখে শুয়ে সকালের অপেক্ষায় রয়েছে— কিন্তু সকাল আর আসছে না, সিন্দবাদও দেখা দিচ্ছে না, রাতের বাতাস কেমন যেন ঠাণ্ড বইছে । হিন্দবাদ ছেড়া কাথাটায় সর্বাঙ্গ মুড়ি দিয়ে গলির মোড়ের দিকে চেয়ে সেই এক টুকরো নীলের গায়ে একটা জাহাজের মাস্তুল কখন দেখা দেয় তারি অপেক্ষায় চেয়ে আছে। দূরে একটা যেন জাহাজের আসার ছপ ছপ, শব্দ পাচ্ছে হিন্দবাদের মনের মধ্যে । কবরী কন্যা কেবলি আজ যাতায়াত করছে। প্রকাণ্ড একটা কবর— তার ধারে এক চমৎকার সুন্দরী— কালো চুলে তাব ফুলের মালা, ঠোটে হাসি লেগে রয়েছে, হাতের আঙল হেনার রঙে হিঙ্গুল বর্ণ। সেই সুন্দরী কন্তে হাতছানি দিয়ে হিন্দবাদকে ডাকতেই সে তার সঙ্গে চলে গেল গলি পেরিয়ে, বোগদাদ ছাড়িয়ে কতদূর কে জানে ? হঠাৎ কন্যা বলে উঠল— এই ঘুমের দেশ, ওই যে সিন্দবাদ! হিন্দবাদ চেয়ে দেখবার চেষ্টা করলে কিন্তু ঘুমে তার চোখ জড়িয়ে গেছে, আর খুলল না – সেলাম আলেকম বলে হিন্দবাদ একবার হাতটা কপাল ছোয়াতে চেষ্টা করলে, হাত উঠল না । \లSbr