পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সার্থী তেপান্তর মাঠ— চার দিকে ধূ-ধূ করছে, তার মাঝে একটি তাল গাছ, সে একলা বাড়ল। দূরে দূরে মাঠ-ঘেরা বন, সেখানে লতাপাতা সব গলাগলি করে আছে দেখা যায়— ঘন-নীল ছায়ার মতো। মাঠের চেয়ে বড়ো আকাশ– সেখানে তারা সব ঘেষাঘেষি ঝিলমিল করছে দেখা যায়— কেউ একা নেই। হাওয়া আসে, তার সঙ্গে আসে তার সাথী ফুলের গন্ধ । ঝড় আসে, তার সঙ্গে তার সাখী আসে তাধি আর বৃষ্টি । মেঘ আসে, তার সঙ্গে আসে বিদ্যুল্লতা অপরূপ সুন্দরী !— সার্থী ছাড়া কেউ নেই। শরতের মেঘ— তাদের সার্থী হয়ে চলে বলাকা— পারিজাতের হারের মতো সার বেঁধে যায় দলে দলে সার্থী অব সেথো তারা ! তালগাছ কেবলি তাদের ডাকে— পাতাগুলো নেড়ে নেড়ে ; কিন্তু তাকে একলা রেখে যে যার দৌড়ে পালায় খেলতে ছোটে । তেপান্তর মাঠে একলা গাছ নিশ্বাস ফেলে— বৃথা আঁকু-পাকু করে— তাদের সঙ্গে চলতে চায়— পারে না । একদিন কোথা থেকে দুটি বাবুই পাখি সেই তালগাছের কাছে আসা-যাওয়া করতে লাগল। পাতার উপর বসে তারা ফুটিতে মিছিমিছি কত কী বকবিকি করে । তার পর একদিন .াঠের থেকে কুটোকাটা নিয়ে তালগাছের প্রাণ যেখানে বাতাসে ঝিলমিল করে সেইখানে চমৎকার করে তাদের সুন্দর বাসাটি বেঁধে নেয় । তালগাছ তাদের দোলা দেয় আর মনে-মনে বলে— মিলল, সার্থী মিলল ! তার পর একদিন খেলাঘর ছেড়ে ছোটো ছোটো পাখি তারা একে একে উড়ে যায়। সবুজ পাতার গাথা শূন্ত বাসা নিয়ে তাল গাছ দোলা দেয় আর চুপ করে কী যেন ভাবে থেকে-থেকে। 8ミ○