পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রেমের এই বিচিত্র ইতিহাস মনে করলেও এখন আমার নিজের বিয়ের দিনগুলি যেন চোখের সামনে উদয় হয়। আমার মনে হয় মৌমাছি আর মানুষের ভালোবাসার তত্ত্বটা তলিয়ে দেখার জন্যে পশুসমাজ থেকে একটা বিশেষ কমিশন বসানো দরকার । আপনারা শুনে সুখী হবেন, আমার নাম এদেশে এমন প্রচার হয়েছে যে রানীর ওখান থেকে আমার জন্তে একটা বিশেষ মজলিসের নিমন্ত্রণ চারি দিকে পাঠানো হয়েছে। কার্ডে লেখা হয়েছে— সন্ত্রাস্ত বিদেশীকে অভ্যর্থনার জন্য রানীর হুকুমে সকলে এরা মধুপানাদি করবে। যা-হোক, রানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চলেছি— দরবারের দেউড়িতে জনকতক হোমরা-চোমরা মাছি এসে আমাকে বেশ করে দেখে শুকে স্থির করে নিলে এমন কোনো বিদেশী গন্ধ আমার ভিতরে বাইরে আছে কি না যাতে করে সভাট নোংরা হতে পারে । আমাকে খরচ করে তারা সভায় হাজির করলে পর মৌচাকেশ্বরী এসে এক ফুলের সিংহাসনে বসলেন, আমি নমস্কার করে বললেম— ‘মহারানী, আমি একজন বাবুই দর্শনসভার প্রধান সদস্য। জেন্ত-সভার পক্ষ থেকে নানা রাজতন্ত্র সমাজতন্ত্রের হিসেব জোগাড়ে নিযুক্ত হয়ে বেরিয়েছি।’ মহারানী হেসে বললেন— ‘আপনি অতি বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান, আপনি দেখতেই পাচ্ছেন আমার দিন কাটানো ভার হত যদি না রাজ-কাজ থেকে বছরে দুবার করে আমাকে ছুটি নিতে না হত। আমাকে মহারানী বলবার কোনো আবশ্যক নেই, রাজনন্দিনী কিংবা মক্ষী বললেই আমি খুশি হব।’ আমি বললেম— ‘রাজনন্দিনা, এদেশে দেখলেম আপনার প্রজারা চাকরের মতো কেবলই খাটছে আর আপনি বেশ আরামে রয়েছেন । এই বড়ো-ছোটো ভেদটা কি ভালো ? রানী বললেন- ‘তা তো বুঝি । কিন্তু রাজ-আইনটা এইরকমই যখন, তখন সেটা মানাই হচ্ছে প্রজার ধর্ম। নাহলে রাজা প্রজ সম্পর্কই উঠে যায়, রাজত্বই থাকে না।’ 8や>