পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একদিন ক্ষুরের মতো পুবের হাওয়া সুভাগার নতুন বাগানে ফুলের বোটা কেটে, গাছের পাতা ঝরিয়ে, তার সাধের মালঞ্চ শূন্যপ্রায় করে শনশন শব্দে চলে গেল। পাখির বাক হাওয়ার মুখে উড়ে গেল, প্রজাপতির ভাঙা ডান ফুলের পাপড়ির মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল, ছেলেব পাল কোথায় অদৃশ্য হল । স্থভাগ তখন সেই ধারা শ্রাবণে একা বসে-বসে বাপমায়ের কথা, শ্বশুরশাশুড়ীর নিষ্ঠুরতা, আর বিয়ের রাত্রে সুন্দর বরের হাসিমুখের কথা মনে করে কঁদিতে লাগলেন ; আর মনে মনে ভাবতে লাগলেন— ‘হায় এই মির্জনে সঙ্গীহীন বিদেশে কেমন করে সারাজীবন একা কাটাব । হরিণের চোখের মতে স্বভাগার কালো-কালো দুটি বড়ো-বড়ে চোখ অশ্রুজলে ভরে উঠল। তিনি পুবে দেখলেন অন্ধকার, পশ্চিমে অন্ধকার, উত্তবে, দক্ষিণে— চারিদিকে অন্ধকার ; মনে পড়ল, এমনি অন্ধকারে একদিন তিনি সেই মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন । আজ ও সেদিনের মতো অন্ধকার— সেই বাদল র হওয়া, সেই নিঃশব্দ প্রকাণ্ড সূর্যমন্দির— কিন্তু হায়, কোথায় আজ সেই বুদ্ধ ব্রাহ্মণ, যিনি সেই তুর্দিনে অনাথিনী অভাগিনী সুভাগাকে অপ্রিয় দিয়েছিলেন ! সুভাগার কালে চোখ থেকে দুটি ফোটা জল জুটি বিন্দু বুঠির মতো অন্ধকাবে ঝরে পড়ল । স্তভাগা মন্দিলের সমস্ত হুয়ার বন্ধ কবে প্রদীপ জ্বালিয়ে ঠাকুবের আরতি কবলেন। তারপর কী জানি কী মনে কবে, শুভাগ সেই সূর্যমূর্তির সম্মুখে ধ্যানে বসলেন । ক্রমে স্থভাগার দুটি চক্ষু স্থির হয়ে এল, চারিদিক থেকে ঝড়ের ঝনঝন, মেঘের কড়মড়ি, ক্রমে যেন দূর হতে বহুদূরে সরে গেল ! স্বভাগার মনে আর কোনো শোক নেই, কোনো দুঃখ নেই। তার মনের অন্ধকার যেন সূর্যের তেজে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। স্বভাগ ধীরে-ধীরে, ভয়ে-ভয়ে, বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের কাছে শেখা সেই সূর্যমন্ত্র উচ্চারণ করলেন ; তখন সমস্ত পুথিবী যেন জেগে উঠল, সুভাগা যেন শুনতে পেলেন, চারিদিকে পাখির গান বাশির তান, আনন্দের কোলাহল ! তারপর গুরু গুরু গভীর গর্জনে সমস্ত আকাশ কঁাপিয়ে, চারিদিক ○ ど)