পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহাসনে বসে ঘোর অত্যাচার আরম্ভ করলেন ; যখন গরীব প্রজাদের গ্রাম জ্বালিয়ে, খেত উজাড় করে তাব মন সন্তুষ্ট হল না ; তিনি যখন হাজার-হাজার ভৗলের মেয়ে দাসীর মতো রাজপুতের ঘরে-ঘরে বিলিয়ে দিতে লাগলেন, যখন প্রতিদিন নতুননতুন অত্যাচার না হলে তাব ঘুম হত না, শেষে সমস্ত ভীলের প্রাণের চেয়ে প্রিয় তাদের একমাত্র আমোদ— বনে-বনে পশু শিকার— যেদিন নাগাদিত্য নতুন আইন কবে একেবারে বন্ধ করলেন, সেদিন তাদের ধৈর্যের বাধ ভেঙে পড়ল । নাগাদিত্য ভীল-পজাদের উপর এই নতুন আইন জারি করে সমস্ত রাত্রি সুখের স্বপ্নে কাটিয়ে সকালে উঠে দেখলেন, দিনটা বেশ মেঘলা মেঘলা, ঠাণ্ডা হাওয়া ছেড়েছে, কোনোদিকে ধুলো নেই, শিকারের বেশ সুবিধা । নাগাদিত্য তৎক্ষণাৎ হাতি সাজিয়ে দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন । সেদিন রাজার সঙ্গে কেবল রাজপুত ! দলের পর দল, বড়ো-বড়ে ঘোড়ায় চড়ে রাজপুত ! সামান্ত ভৗলের একটি ছোটো ছেলের পর্যন্ত যাবাব হুকুম নেই ! শিকার দেখলে খাচার ভিতরে চিতাবাঘ যেমন ছটফট কবে আজি শিকারের দিনে ঘরের ভিতর বসে থেকে ভীলদের প্রাণ তেমনিই ছটফট করছে—এই কথা ভেবে নিষ্ঠুর নাগাদিত্যের মন আনন্দে নৃত্য কবতে লাগল । মহারাজ নাগাদিত্য দলবল নিয়ে ভেবি বাজিয়ে হৈ-হৈ শব্দে পর্বতের শিখরে চড়লেন ; বজের মতো ভয়ংকর সেই ভেরির আওয়াজ শুনে অন্তদিন মহিষেব পাল জল ছেড়ে পালাত, বনের পাখি বাসা ছেড়ে আকাশে উঠত, হাজার-হাজার হরিণ পাণ-ভয়ে পথ ভুলে ছুটতে-ছুটতে যেখানে শিকারী সেইখানে এসে উপস্থিত হত, ঘুমন্ত সিংহ জেগে উঠত, বাঘ হাকার দিত— শিকারীরা কেউ বল্লম-হাতে মহিষের পিছনে, কেউ খাড়া-হাতে সিংহের সন্ধানে ছুটে চলত ; কিন্তু নাগাদিত্য আজ বারবার ভেরি বাজালেন, বারবার শিকারীর দল চিৎকার করে উঠল, তবু সেই প্রকাণ্ড বনে একটিও বাঘের ૧૭