পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাদের দিকে চেয়ে ভাবতে লাগলেন-— আজি কী আনন্দ । আজ কী আনন্দ ! হঠাৎ একটুখানি পুবের হাওয়া গাছের পাতা কঁাপিয়ে ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে হু-হু শব্দে পশ্চিমদিকে চলে গেল। সেই সঙ্গে বড়ো-বড়ো বৃষ্টির ফোট টুপটাপ করে চাপাগাছের সবুজ পাতার উপরে ঝরে পড়ল। বাপ্পা আকাশের দিকে চেয়ে দেখলেন— পশ্চিমদিক থেকে একখানা কালো মেঘ ক্রমশ পূর্বদিকে এগিয়ে চলেছে— মাঝে-মাঝে গুরুগুরু গর্জন আর ঝিকিমিকি বিদ্যুৎ হানছে! বাপ্পা তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালেন, মনে পড়ল, ঘরে ফিরতে হবে। দুধের মতো শাদা তার ধবলী গাই বনের মাঝে ছাড়া আছে। তিনি চাপাগাছ থেকে ছাদন খুলে নিয়ে ধবলী গাইটির সন্ধানে চললেন। তখন চারিদিকে অন্ধকার, মাঝে-মাঝে গাছে-গাছে রাশি-রাশি জোনাকি-পোকা হীরের মতো ঝকঝক করছে, আর, জায়গায়-জায়গায় ভিজে মাটির নরম গন্ধ বনস্থল পরিপূর্ণ করছে। বাপ্পা সেই অন্ধকার বনের পথেপথে ধবলীর সন্ধানে ফিরতে লাগলেন। হঠাৎ এক জায়গায়, ঘন বেতের বনের আড়ালে বাপ্পা দেখলেন— এক তেজোময় ঋষি ধ্যানে বসে আছেন ; ঠিক তার সম্মুখে মহাদেবের নদীর মতো তার ধবলী গাই স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে, আর সেই শাদা গাইয়ের গাঢ় তুধ স্বধার মতো একটি শ্বেতপাথরের শিবের মাথায় আপনা-আপনি ঝরে পড়ছে । বাপ্পা অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলেন । ক্রমে ধ্যানভঙ্গে মহর্ষির দুটি চোখ সকাল-বেলায় পদ্মের পাপড়ির মতো ধীরে-ধীরে খুলে গেল। মহর্ষি মহাদেবকে প্রণাম করে এক অঞ্জলি তুধের ধারা পান করলেন । তারপর বাপ্পার দিকে ফিরে বললেন— ‘শোনো বৎস, আমি মহর্ষি হারীত। তোমায় আশীর্বাদ করছি— তুমি দীর্ঘজীবী হও, পৃথিবীর রাজা হও। তোমার ধবলীর ছধের ধারায় আজ আমি বড়োই তুষ্ট হয়েছি। আজ আমার মহাপ্রস্থানের দিন, এই শেষদিনে তোমায় আর কী দেব ? এই ভগবতী ভবানীর খাড়, এই অক্ষয় ধনুঃশর— এই খাড়া পাহাড়ও বিদীর্ণ br8