পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চেলির জোড় পরা আচার্যবেশে দালানে নেমে গিয়ে মন্ত্র পাঠ করছেন, যেমন ১১ই মাঘে আগে করতেন । এই তিন চেহারা তার, আর-এক চেহারা দেখেছি একেবারে শেষকালে । ঐশ্বর্য সম্বন্ধে তার বিতৃষ্ণার একটি গল্প আছে। শৌখিন হলেই যে ঐশ্বর্যের উপর মমতা বা লোভ থাকে তা নয়। শৌখিনতা হচ্ছে ভিতরের শখ থেকে । কর্তাদাদামশায়ের সেই গল্পই একটি বলি শোনো । শ’বাজারের রাজবাড়িতে জলসা হবে, বিরাট আয়োজন । শহরের অর্ধেক লোক জমা হবে সেখানে ; যত বড়ে বড়ো লোক, রাজ-রাজড়া, সকলের নেমস্তন্ন হয়েছে । তখন কর্তাদাদামশায়দের বিষয়সম্পত্তির অবস্থা খারাপ— ওই যে-সময়ে উনি পিতৃঋণের জন্য সব-কিছু ছেড়ে দেন তার কিছুকাল পরের কথা । শহরময় গুজব রটল, বড়ে বড়ো লোকের বলতে লাগলেন– দেখা যাক এবারে উনি কী সাজে আসেন নেমস্তন্ন রক্ষা করতে। বাড়ির কর্মচারিরাও ভাবছে, তাই তো ! গুজবুট বোধ হয় কর্তাদাদামশায়ের কানেও এসেছিল । তিনি করমচাঁদ জহুরীকে বৈঠকখানায় ডাকিয়ে আনালেন বিশ্বেস দেওয়ানকে দিয়ে। করমর্চাদ জহুরী সেকালের খুব পুরোনে। জহুরী, এ বাড়ির পছন্দমাফিক সব অলংকারাদি করে দিত বরাবর। কর্তাদাদামশায় তাকে বললেন, একজোড়া মখমলের জুতোয় মুক্তে দিয়ে কাজ করে আনতে। তখনকার দিনে মখমলের জুতো তৈরি করিয়ে আনতে হত। করমচাঁদ জহুরী তে একজোড়া মখমলের জুতো ছোটো ছোটো দানা দানা মুক্তে দিয়ে সুন্দর করে সাভিয়ে তৈরি করে এনে দিলে । এখন জাম-কাপড়— কী রকম সাজ হবে । সরকার দেওয়ান সবাই ভাবছে শাল-দোশালা বের করবে, না সিন্ধের জোব্বা, না কী। কর্তাদাদামশায় হুকুম দিলেন— ও-সব কিছু নয়, আমি শাদা কাপড়ে যাব। তখনকার দিনে কাটা কাপড়ে মজলিসে যেতে হত, ধুতি-চাদরে চলত না । জলসার দিন কর্তাদাদামশায় শাদা আচকান জোড়া পরলেন, মায় মাথার মোড়াসা পাগড়িটি অবধি শাল, কোথাও জরি-কিংখাবের নামগন্ধ নেই। আগাগোড়া ধবধব, করছে বেশ, পায়ে কেবল সেই মুক্তে-বসানো মখমলের জুতোজোড়াটি। সভাস্থলে সবাই জরিজরা-কিংখাবের রঙচঙে পোশাক পরে হীরেমোতি যে যতখানি পারে ধনরত্ব গলায় ঝুলিয়ে, আসর জমিয়ে বসে আছেন— মনে মনে ভাবখানা ছিল, দেখা যাবে দ্বারকানাথের ছেলে কী লাজে আসেন। সভাস্থল ԵրՊ