পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কর্তাদাদামশায় তাকে বললেন, ব্রাহ্মধর্ম পড়ে । সবাই একেবারে থ। শাস্ত্রীমশায় ব্রাহ্মধর্ম পড়তে লাগলেন। কর্তাদাদামশায় সেই সোজা বসে বসেই তা শুনতে লাগলেন, আর সেইসঙ্গে আস্তে" আস্তে উপাসনা করতে লাগলেন। সবাই বুঝল এইবারে তিনি চাঙ্গ হয়ে উঠেছেন। উপাসনার পরে ডাক্তার এসে নাড়ী টিপলেন, নাড়ী চন্‌বন করে চলছে ; কর্তাদাদামশায় একেবারে সহজ অবস্থা লাভ করেছেন । ডাক্তার: নীলমাধব নিজে আমাদের বলেছেন, এ রকম করে বেঁচে উঠতে দেখি নি কখনো । সেকাল হলে এ রকম অবস্থায় রুগীকে গঙ্গাযাত্রা করিয়ে দু-তিন আঁজলা জল মুখে দিতে না দিতেই শেষ হয়ে যেত সব। এ যেন মরে গিয়ে ফিরে আসা। পরে কর্তাদাদামশায়ের মুখে আমরা গল্প শুনেছি, তা বোধ হয় উনি লিখেও গেছেন যে, এক সময়ে ওঁর মনে হল ওঁর উপরে আদেশ হয় ‘তোমার কাজ এখনো বাকি আছে । যে যাত্রা তো তিনি কাটিয়ে উঠলেন, কিছুকাল বাদে ডাক্তাররা বললেন: হাওয়া বদল করতে। কোথায় যাবেন । ওঁর আবার বরাবরের ঝোক পাহাড়ে যাবার, ঠিক হল দাৰ্জিলিঙে যাবেন । সব জোগাড়-যস্তোর হতে লাগল। দীপুদ। বললেন, আমি একলা পারব না, কর্তাদাদামশায়ের এই শরীর, যাওয়া-আসা, হাঙ্গামা কত শেষটায় উনি ওখানেই, দেহ রাখুন, আমিও দেহ রাখি। ডাক্তার নীলমাধব সঙ্গে গেলেন। আরো দু-চারজন কারা-কারাও সঙ্গে ছিল। দাৰ্জিলিঙে গিয়ে উনি কী খেতেন যদি শোন, দীপুদার কাছে সে গল্প শুনেছি। এই এক দিস্ত। হাতে-গড় রুটি, এক বাটি অড়হড় ডাল, আর একটি বাটিতে গাওয়া ঘি গলানে। সেই রুটি ডালেতে বিয়েতে জুবড়ে তিনি মুখে দিতেন। এই তার অভ্যেস। দীপুদা বলতেন, আমি তো ভয়ে ভয়ে মরি ওঁর খাওয়া দেখে, কিন্তু ঠিক হজম করতেন সব । নেমে যখন এলেন কর্তাদাদামশায়, লাল টক্‌টক্‌ করছে চেহারা, স্বাস্থ্যও চমৎকার। কে বলবে কিছুকাল আগে তিনি মরণাপন্ন অমৃখে ভুগেছিলেন । পার্ক স্ত্রীটে একটা খুব বড়ো বাড়ি নেওয়৷ হয়েছিল, দাfজলং থেকে নেমে সোজা সেখানেই উঠলেন। সেই বাড়িতে অনেক দিন ছিলেন । তার পর কী একটা হয়, বাড়িওয়ালা বোধ হয় বাড়িটা অন্য লোকের কাছে বিক্রি করে দেয়, ভাড়াটে উঠে যাবার জন্ত তাগিদ দিতে থাকে, কর্তাদাদামশায় বললে, আর ভাড়াটে বাড়ি নয়, আমি নিজের.