পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের সে-সব আসবীপত্র দেখিয়ে বলতেন, কর্তাদাদামশায়ের দেওয়া এ-সব । কর্তাদাদামশায় শেষদিন পর্যন্ত ওই ঘরেই ছিলেন । বড়োপিসিমা র্তার সেবা করতেন। তিনি জানতেন কর্তাদাদামশায়ের পছন্দ-অপছন্দ । আহা, বেচারি বড়োপিদিম, বিধবা ছিলেন তিনি, কী নিখুত সেবা, আর কী ভালোবাসা বাপের জন্য – আমন আর দেখা যায় না । সে সময়ে আমি কর্তাদাদামশায়ের কয়েকটি ছবি একেছিলুম। শশী হেস ইটালি থেকে আর্টিস্ট হয়ে এলেন, তিনিও কর্তাদাদামশায়ের ছবি আকলেন । তার পর অনেক দিন কাটল, অনেক কাণ্ডাই হল । কর্তাদাদামশায় আছেন উপরের ঘরেই । সারা বাড়ি যেন গম্গম করছে, এমনিই ছিল তার প্রভাব। এখন যেমন বাড়িতে রবিকাকা ডাকলে চার দিক তার প্রভাবে সরগরম হয়ে ওঠে, চার দিকে একটা অভয়, আলো ছড়ায়, তেমনি কর্তাদাদামশায়েরও চার দিকে যেন দব দপ ছড়াত ৷ কর্তাদ৮ামশায়ের চতুর্থ রূপ যা আমার মনে ছাপ রেখে গেছে, আর এই হল তার শেষ চেহারা। কয় দিন থেকে কর্তাদাদামশায়ের শরীর খারাপ, বা দিকের পাজরার নীচে একটু-একটু ব্যথা । সোজা হয়ে বসতে পারেন না— বঁ দিকে কাত হয়ে বসতে হয়। ডাক্তাররা বললেন, একটা অ্যাব সেস ফর্ম করেছে, অপারেশন করতে হবে। দীপুদা ইনভ্যালিড চেয়ার, প্রকাণ্ড ইনভ্যালিড কোচ, কিনে নিয়ে এলেন সাহেবি দোকান থেকে। কোঁচটা চামড় দিয়ে মোড়, এক হাত উচু গদি, সেই কোঁচেই কর্তাদাদামশায় মারা যান। তিনি বরাবর দক্ষিণ দিকে পা করে শুতেন। আমাদের আবার বলে, উত্তর দিকে মাথা দিয়ে শুতে নেই, কিন্তু কর্তাদাদামশায়কে দেখেছি তার উণ্টে। দক্ষিণ দিকে পা নিয়ে শুতেন, মুখে হাওয়া লাগবে । দীর্ঘ পুরুষ ছিলেন, অত বড়ে লম্বা কোঁচটিতে তো টান হয়ে শুতেন— এতখানি হাটু অবধি পা বেরিয়ে থাকত কোঁচ ছাড়িয়ে । অপারেশন হল । ভিতরে কিছুই পাওয়া গেল না ; ডাক্তাররা বললেন, কোল্ড অ্যাবসেস। যাই হোক, ডাক্তাররা তো বুকে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিয়ে চলে গেলেন । কর্তাদাদামশায় রোজ সকালে সূর্যদর্শন করতেন । ঘরের সামনে পুবদিকের ছাদে গিয়ে বসতেন, স্বর্যদর্শন করে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে পরে ঘরে 36