পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এখনে মনে আছে সভায় বাবা বলতেন, জ্যোতি, তুমি তোমার হার.মোনিয়াম- বাজাও, রবি, তোমার সেই গানটা করে—বলি ও আমার গোলাপবালা'। ওই গানটি তখন সবার খুব পছন্দ ছিল। থেকে থেকে হুকুম হত, ‘গোলাপবালা’র গানটা হোক । কিন্তু বক্তা ঈশ্বরবাবু, তিনি একেবারে রবিকাকার উণ্টো। তিনি বলতেন, কী কবিতা লেখে রবিবাবু, চল চল, বল, বল, ও কি কবিতা। আর একে কী গান বলে, ‘বলি ও আমার গোলাপবালা । হ্য, গলা হচ্ছে সোমবাবুর যেমনি গলা তেমনি গান গায় বটে। রবিবাবু আবার কৗ গান গায়। ঈশ্বরবাবুকে আর আমরা বাগ মানাভে পারি নে। কুড়ে গোপাল মস্ত ওস্তাদ, তিনিও শেষটায় স্বীকার করেছিলেন রবিকাকার গানে কিছু আছে। কিন্তু ঈশ্বরবাবুকে আর পেরে উঠছি না। তখন আমরা ছিলুম রবিকাকার গানের কবিতার পরম ভক্ত ; কেউ কিছু সমালোচনা করলে কোমর বেঁধে লাগভূম, তাদের বুঝিয়ে ঘাড় কাত করিয়ে তবে ছাড়তুম। তখন বঙ্গবাসী সঞ্জীবনী কাগজ বের হত। ঈশ্বরবাবু বঙ্গবাসী দেখতে পারতেন না ; বলতেন, বঙ্গবাসী আবার একটা কাগজ, ইংলিশম্যান পড়ে। ইংলিশম্যান কাগজ দ্বারকানাথের আমলের, আগের নাম ছিল হরকরা, তিনিই বের করে গেছেন । তখন সেই বঙ্গবাণীতে শশধর তর্কচূড়ামণি, কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ ও চন্দ্রনাথ বস্থ এই তিনজন লোক রবিকাকার কবিতা গল্প নিয়ে খুব লেখালেখি করতেন, তত্ত্বাতঙ্কি হত। তখনকার কাগজগুলিই ছিল ওইরকম সব খোচাখুঁচিতে ভরা। রবিকাক। ওঁরা তখন একটা কাগজ বের করেন যাতে কোনোরকম গালাগালি ঝগড়াঝাটি থাকবে না। থাকবে শুধু ভালো কথা, কাগজের নাম বড়োজ্যাঠামশায় দিলেন ‘হিতবাদী’ । সেই সময়েই ‘সাধনায় বের হল রবিকাকার ‘হিং টিং ছট’ নামে কবিতাটি । আমরা ঈশ্বরবাবুকে গিয়ে বললুম, দেখে তো এই কবিতাটি কেমন হয়েছে, একবার পড়ে দেখো, একে কবিতা বলে কি না । এই বলে আমরাই তাকে কবিতাটি পড়ে শোনাই । সেই কবিতাটি শুনে ঈশ্বরবাবু ভারি খুশি ; বললেন, এটা লিখেছে ভালো হে, এতদিনে হয়েছে ছোকরার, হ্যা একেই বলে .লেখা । ծ ՔԵ