পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করে হেসে উঠলেন। তখন বুঝলুম, ভুলুট আমায় ঠকিয়েছে। এমন রাগ হল তার উপরে। রাত্তিরে খাওয়াদাওয়া সেরে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লুম। সকালে ঘুম ভেঙে দেখি প্রাইজ না-পাওয়ার দুঃখু আর একটুও নেই। তা লেখাপড়ায় মন বসবে কি ? তোমাদের মতো তো গাছের ছায়ায় খোলা হাওয়ায় বসে পড়তে পাই নি কখনো । স্কুলের ওই পাকা-দেয়াল-ঘেরা বন্ধ ঘরের ভিতরে দম যেন আটকে আসে আমার । যতক্ষণ পারি ঘরের বাইরেই ঘোরাফেরা করি। স্কুলের পাশে শু্যাম মল্লিকের বাড়ি, তাদের বাড়ির একটি মেয়ে পড়তে আসে আমাদের স্কুলে, ইজের-চাপকান পরে, বেণী ঝুলিয়ে । তাদের বাড়িতে একটা পোষা কালে ভালুক চরে বেড়ায় সামনের বাগানে, দেখা যায়, ইস্কুল থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাল্লুক দেখি। ইস্কুলঘবের বাইরে যাকিছু সবই আমার কাছে ভালো লাগে। ইস্কুলের গেটের কাছে রাস্ত । নানারকম লোক যাচ্ছে আসছে, তাদের আনাগোনা দেখি । এইরকম দেখতে দেখতে একদিন যা কাণ্ড । কাবুলিওয়ালার রাগ দেখেছ কখনো ? গেটের কাছে কতগুলি কাবুলিওয়াল রোজই বসে থাকে আঙর বেদান নিয়ে। টিফিনের সময় ছেলেরা কিনে খায় । সেদিন হয়েছে কি, বড়োছেলেদের মধ্যে কে একজন বুঝি এক কাবুলিকে বলেছে বেইমান । আর যায় কোথায়। দেখতে দেখতে সব কয়টা কাবুলি উঠল রুখে, দরোয়ান বুদ্ধি করে তাড়াতাড়ি লোহার ফটকট দিলে বন্ধ করে। বাইরে কাবুলি, ভিতরে ছেলের দল ; রাস্ত থেকে পড়তে লাগল টপটপ কাবলি বেদান। মাথার উপরে যেন একচেটি শিলাবৃষ্টি হয়ে গেল। জানো তো, মারপিট দেখলে আমি থাকি বরাবরই সবার পিছনে । শিশুবোধে চাণক্যশ্লোক মনে পড়ে— ন গণস্তাগ্রতে। গচ্ছেৎ । তা বাপু, সত্যি কথাই বলব। আমি ওই পিছনে থেকেই ফাট বেদানাগুলো ফাঁকতালে কুড়িয়ে কুড়িয়ে খেতে লাগলুম । সেদিনের ঝগড়ায় জিত হল বটে আমারই । কিন্তু ইস্কুলের ছুটির পর বাড়ি ফিরতে হবে ; কাবুলিওয়ালার ভয় যায় না। পালকির ভিতরে বসে আচ্ছা করে দরজা বন্ধ করে অতি ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরি শেষে । নর্মাল স্কুলের এক-এক পণ্ডিতের চেহারা যদি দেখতে তো বুঝতে কেমন পণ্ডিত সব ছিলেন তারা । আমাদের পড়ান লক্ষ্মীনাথ পণ্ডিত, চেহারা তার ঠিক যেন মা দুর্গার অঙ্কুর । মস্ত বড়ে মাথা, কালে কুচকুচে গায়ের রঙ, বোয়াল уlо е