পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লাগালেন পিঠে। বেতের ঘায়ে পিঠ হাত লাল হয়ে গেল— তখনো বলছি পুডিং। রামলাল ব্যস্ত হয়ে বারে বারে দরজায় উকি দিয়ে দেখে, এ কী কাও হচ্ছে । যা হোক, বাড়ি এলাম। ছোটোপিসিমা বললেন, “কী ব্যাপার ? রামলাল বললে, “আমার বাবু আজ বডড মার খেয়েছেন। আমিও জামা খুলে পিঠ দেখালুম, হাত দেখালুম। দড়ির দাগ বসে গিয়েছিল হাতে। বাবামশায় তৎক্ষণাৎ নর্মাল স্কুল থেকে নাম কাটাবার হুকুম দিলেন ; বললেন, ‘কাল থেকে ছেলেরা বাড়িতে পড়বে। চুকে গেল ইস্কুল যাবার ভয় ; জোড়া বেত খেয়ে ছাড়া পেলুম। এক ‘পাডিং-এই ইংরেজি বিদ্যে শেষ। পরদিন থেকে বাড়িতে বাবামশায়ের মাস্টার যদু ঘোষাল আমায় পড়বার ভার নিলেন । VC) এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে নামকাটা সেপায়ের কী বিপদ হল শোনো । স্কুলে যাওয়া থেকে তো নিস্তার পেলুম, ভাবলুম, বেশ হল, এবার বড়োদের মতোই বুঝি আমি স্বাধীন হয়ে গেলুম। যা ইচ্ছে তাই করতে পারব, স্নানের জন্য, ভাত খাবার জন্য চাকররা আর তাড়া দেবে না । নিয়মমত চলবারও দরকার হবে না । লম্বা পুজোর ছুটি, গরমের ছুটি পেলে যেমন আনন্দ হয় তেমনি আনন্দে দিন কাটবে বুঝি। কবে স্কুল খুলবে সে ভয়ও নেই। এই-সব ফুতিতেই মাতলুম। কিন্তু দুদিন যুেতে না যেতেই দেখি, ওমা, তা তো নয়। যদু ঘোষাল মাস্টার বাড়িতেই থাকেন ; ঠিক সময়ে পড়তে বসতে হয় তার কাছে । দশটা বাজলেই চাকররা তাড়া লাগায়। স্বান করে খেয়ে নিতে হয় চটপট । খেয়েদেয়ে ঘুরঘুর করি। স্কুল ছুটি তো শুধু আমারই হয়েছে। দাদা, ইদুল ওরা সবাই চলে যান ইস্কুলে। ভেবেছিলেম বেশ খেলাধুলো হুটোপটি করে সময় কাটবে রোজ । তা আর হয় না । খেলব কার সঙ্গে ? খেলার সাথির সবাই স্কুল করে, আমি একলা ঘরে কী করি ভেবে পাই নে ! চাকররা থাকে তাদের কাজে ব্যস্ত। রামলাল ধমক দেয়, কোথাও যেয়ে না, চুপটি করে বসে থাকে। এ দিকে ও দিকে গেছ কি মুশকিল হবে বলে দিচ্ছি। গলির মোড়ে ওই ওইখানে কন্ধকাটা আছে, ধরে নেবে।’ বলে গলির মোড়ে একটা বাসাবাড়ির নীচে ড়েনের থিলেন ছিল, সেইটে আঙল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ১৮২