পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাছে দেখা দিতে লাগল। এখানে ওখানে উকিঝুকি দিয়ে তখন বাড়িটার সঙ্গে আমার পরিচয় হচ্ছে। জোড়াসাঁকোর বাড়িকে যে কত ভালোবেসেছি। বলি যে, ও বাড়ির ইটকাঠগুলিও আমার সঙ্গে কথা কয়, এত চেনাপরিচয় তাদের সঙ্গে ; তা, ওই তখন থেকেই তার শুরু । পড়ে আছি ; দেখছি, ঘরের কোথায় কোথায় কার্নিশের ছায় পড়েছে, কোথায় টিকটিকিট পোকা ধরবার জন্য ওৎ পেতে আছে, চড়ুইপাখি ছোট্ট কুলুঙ্গিতে বাসা বঁধছে। আবার কোথায় কোন উচুতে ছাদের উপরে লোহার শিকে এক চিল বসে আছে, তাকে দেখছি তো দেখছিই । এক সময়ে সে চি-:- করে দুটো চক্কর খেয়ে উড়ে গেল । আবার কখনো-বা চেয়ে থাকতুম সামনে শাদ দেওয়ালের দিকে, ও পাশের উত্তরের খড়খড়ির ফাক দিয়ে দিনের আলো এসে পড়েছে তাতে ; বাইরে মানুষ হেঁটে যায়, ছায়াটিও চলে যায় ঘরের ভিতরে দেয়ালের গা দিয়ে। রঙিন একএকখানি ছবির মতো তারা আলোর রাস্ত ধরে চলতে চলতে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। এই ছবি-দেখা রোগ আমার এখনো আছে, দিনে দুপুরে ঘরের ভিতরে বসে বসে ছবি দেখি। কাল দুপুরে কোঁচে বসে বিমোচ্ছি। বাইরের তুলগাছের ছায়া এসে পড়েছে দেয়ালে, পাতাগুলি নড়ছে হাওয়াতে, পিছনের আকাশে শীদ মেঘ– ঠিক যেন চাদের আলোর ছবি একটি। তখনো সব দেখতুম, একমনে দেখতুম। এই দেখতে যখন আরম্ভ করলুম তখন আর একলা থাকতে খারাপ লাগত না । এ দিকে আবার নানারকম শব্দও আসে কানে, দুপুর হতেই গলির মোড়ে শব্দ হল ঠং ঠং, বাসন চাই, বাসন ? শব্দ চলে গেল দূরে। তার পরে এল চুড়ি চাই, খেলনা চাই ? প্রায়ই মায়েদের মহলে তাদের ডাক পড়ে, ঝুড়ি ঝুড়ি নানা রঙের কাচের চুড়ি সাজিয়ে বসে এসে । এক রকমের মজার খেলনা থাকে তাদের ঝুড়িতে ; টিনের এতটুকু এতটুকু মাছ আর চুম্বকের কাঠি। মাছটি জলে ভাসিয়ে চুম্বকের কাঠি দিয়ে টানলেই মাছও সঙ্গে সঙ্গে জলের উপর চলতে থাকে। এমন লোভ হয় ওই খেলনার জন্য । বাড়ির অন্য সব ছেলেমেয়ের প্রায়ই পায় সেই খেলনা, আমি পাই কচিৎ কখনো । আমাকে কেউ যে খেয়ালই করে না তেমন । তার পর বেলা পড়ে এলে গরমের দিনে বরফ ওয়ালা হেঁকে যায়, বরিফ, বরিফ চাই, বরিফ– কুলপি বরিফ ? জ্যোতিকাকামশায় লিখেছিলেন একটা গান। واسbھ